ডেস্ক রিপোর্ট : ক্ষমতার দাপট দেখালো সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। কোনো ধরণের দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই ভেঙে ফেলেছে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি ও রাস্তায় নির্মিত দেয়াল। সিলেট নগরীর তাঁতীপাড়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন রাস্তার দখল নিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সব ধরণের আইন লঙ্ঘন করেছে- এমন অভিযোগ ওঠেছে। এক্ষেত্রে আদালতের দুটো নির্দেশনাও অমান্য করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ও নোটিশ ছাড়াই ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি ও রাস্তার দেয়াল ভাঙার বিষয়ে কাস্টমস কমিশনারের বক্তব্যও রহস্যের জন্ম দিচ্ছে। তিনি দাবি করছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করার জন্যই এমনটা করেছে।
সিলেটের মিউনিসিপালিটি মৌজায় জে.এল. নং ৯১, এস.এ খতিয়ান নং ১৪৩/৯৮৫ নামজারী খতিয়ান নং ৮০৫৩, এস.এ দাগ নং ৫২৯১ ও ৫২৮৫ দাগে বাড়ী ও রাস্তা রকম ০.১০৫০ একর ভূমি, যা বি.এস, জে.এল নং ৭৬, ডি.পি খতিয়ান নং ৯১০৫, বি.এস দাগ নং ১৬৪২১ এ তসদিককৃত ভূমি কাজী মোশাররফ হোসেন মৌরসী ও উত্তরাধিকারী সূত্রে মালিক। ভূমিটি তাদের নামে নামজারীসহ নিয়মিত সরকারি রাজস্ব প্রদান করে আসছেন। এ ভূমি সংলগ্ন রাস্তা নিয়ে এডিএম কোর্ট ও জজকোর্টে একাধিক রায় রয়েছে। আদালত সামাজিকতার স্বার্থে কাজী মোশাররফ হোসেনের ব্যক্তি মালিকানাধীন রাস্তায় জনসাধারণের বিশেষ করে, তার প্লটের পরের প্লটগুলো বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা মেনে পার্শ্ববর্তী প্লটের বাসিন্দাদের চলাচলে কখনো বাধা দেননি কাজী মোশাররফ হোসেন।
সম্প্রতি কাজী মোশাররফ হোসেনের মালিকানাধীন ভূমি ও রাস্তার দখল নিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক দেয়াল ভেঙে তাদের চলাচলের পথে গেট স্থাপন করতে আসে। খবর পেয়ে মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে আদালতের রায়, পর্যবেক্ষণের বিষয়টি তুলে ধরে বাধা দিলে কাস্টমস কর্মকর্তারা তা আমলে নেন নি। এ সময় ভূমির মালিকসহ তার লোকজনের সাথে খারাপ আচরণ করে জোরপূর্বক দেয়াল ভেঙে গেইট স্থাপন করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মারুফ আহমদ জানান, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যে আচরণ করেছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাদের আচরণ বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের অনুচরের মতোই ছিলো। তারা জোরপূর্বক ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমিটি দখলে নিতেই দেয়াল ভেঙেছে। দেয়াল ভাঙতে আসার কোনো কারণ কিংবা অনুমতিপত্র দেখাতে পারে নি। অবস্থা এমন ছিলো যেনো, জোর যার, মুল্লুক তার। ১৯৫২ সালে কাজী মোশাররফের মা জোবেদা খাতুনের নামে কেনা। এরপর থেকেই তিনি ও তার উত্তরাধিকারীরা এ সম্পত্তি ভোগ করে আসছে। ঘটনার পর আমরা কাস্টমস অফিসে কাগজ নিয়ে কমিশনারের সাথে দেখা করি। তিনি জানান বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শেষে জানাবেন। কাজ বন্দ থাকার কথা তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ বন্ধ হয় নি। যারা ভাঙতে এসেছিলো তারা জানায়, তাদের কাছে কোনো কাগজ নেই। কমিশনারের কাছে। আমরা কমিশনারের সাথে দেখা করলে তিনি কাজ বন্ধ রাখার আশ্বাস দিলেও ভাঙার অনুমতি সংক্রান্ত কোনো দাপ্তরিক কাগজ দেন নি।
স্থানীয় অমৃত হাসান এমেলি জানান, কাস্টমসের পুকুরের পশ্চিম দিক মালিকানা জায়গা। কাস্টমস বহিরাগতদের নিয়ে এর আগেও পশ্চিম দিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার বেড়া জোরপূর্বক নিয়ে যায়। কাজী মোশাররফের মালিকানাধীন ভূমি ও রাস্তা দখলের চেষ্টা আগে রবারেরই অনুরূপ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এভাবে জোরপূর্বক ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি দখলের চেষ্টা কেনো করলো, তা রহস্যজনক।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের এমন জোরপূর্বক ভূমি ও রাস্তা দখলের চেষ্টায় হতভম্ব হয়ে পড়েন ভূমির মালিক। তিনি পরদিন কাস্টমস কমিশনারেট অফিসে যোগাযোগ করলেও সদুত্তর পান নি। দেশে ৫ আগস্টের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কাস্টমস কর্মকর্তাদের এমন আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি। ভূমি মালিক কাজী মোশাররফ হোসেন বলেন, ওই দিন সন্ধ্যায় আমি জানতে পারি, কাস্টমসের লোকজন আমার ভূমি দখলের চেষ্টা করছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে কাস্টমসের লোকজনকে আমার কাগজ দেখিয়ে, তাদের কাগজ দেখাতে বলি। এতে তারা কোনো কাগজপত্র না দেখিয়ে তারা অসদাচরণ করে। সব জায়গা তাদের বলে আমাকে ধমকও দেয়। আমি অসুস্থ, বৃদ্ধ হওয়ায় আর কিছু বলিনি। আমার ছেলেরা দেশের বাইরে। আমার প্রশ্ন সকল কাগজ থাকা সত্ত্বেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কেনো জোরপূর্বক আমার জায়গা দখলে নিতে চায়? তিনি আরো বলেন, পরস্পর আমরা জানতে পেরেছি, কাস্টমসের কয়েকজন আর্থিকভাবে লাভবান হয়েই অনৈতিকভাবে এই দখল চেষ্টা চালিয়েছে।
এদিকে কাজী মোশাররফ হোসেনের পক্ষে কাস্টমস কমিশনারের কাছে ১৮ নভেম্বর লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেছেন সিলেট বারের এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক। নোটিশে তিনি উল্লেখ করেন, নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে কাস্টমস কর্তৃক সৃষ্ট সকল বাধা অপসারণ করে রাস্তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে না দিলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় কাস্টমস কমিশনার মো. তাসনিমুর আদালতের ২টি মামলায় রায় সম্পর্কে অবগত এবং ভূমিটি কাস্টমসের বলে দাবি করেন। তবে তিনি জানান, কোনো ধরণের দাপ্তরিক নির্দেশনা ছিলো না, রাস্তার দেয়াল ভাঙার বিষয়ে। বিষয়টি ব্যক্তিগত আক্রোশ না দাপ্তরিক কাজ- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যক্তি আর দপ্তর একই। রাস্তায় যখন বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতা থাকবে, তা অপসারণের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের- এমন যুক্তি দাঁড় করান রাস্তার দেয়াল ভাঙা নিয়ে।