বিশ্বনাথ প্রতিনিধি : সিলেটের বিশ্বনাথে চাচার বসতঘরে কিশোর সাইমের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ৬জনকে আসামী করে বিশ্বনাথ থানায় গত ২৯ নভেম্বর রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের মা রত্না বেগম।মামলা নং ১২। ইতিমধ্যে এই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য আটক ৩জনকে আসামী দেখিয়ে শুক্রবার কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আব্দুল হান্নান আটক ৩জনকে ৫দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছেন।
বিশ্বনাথ থানায় দায়েরকৃত লিখিত এজাহারে নিহতের মা ও বিশ্বনাথ পৌরসভার জানাইয়া নোয়াগাঁও গ্রামের নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী রত্না বেগম বলেন য, আমার ছোট ছেলে রাহি আহমদ ওরফে সাইম (১৭), ১নং বিবাদী মোঃ তাহির মিয়া (৩৭) , পিতা:- মৃত হাজী তৈমুছ আলী, গ্রাম:- জানাইয়া নোয়াগাঁও এর ছেলে তারেক আহমদ (১৫), এর সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ১নং বিবাদীর বাড়িতে যাতায়াত করে থাকে। প্রায়ই তারা আমার নিহত ছেলে রাহি আহমদ ওরফে সাইমকে মোবাইল করে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায় এবং খেলাধুলা করে চলে আসে। গত ২৪ নভেম্বর থেকে আমার ছেলে বিবাদীদের বাড়িতে থাকতো, বাড়িতে ফিরে না আসায় গত ২৭ নভেম্বর দুপুর অনুমান ৩ ঘটিকার সময় আমি নিজে গিয়ে আমার ছেলেকে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে আসার সময় আমার ছেলে রাস্তার মাঝখানে এসে আমাকে দেখায় যে, ১নং বিবাদীর বোন এই মামলার ২নং আসামী নিলুফা বেগম(৩৪) পার্শ্ববর্তী দোকানদার দিলু মিয়ার পাওনা টাকা দেওয়ার জন্য =১২,৫০০/= টাকা দিয়েছে।আমার ছেলে বাড়ীতে আসিয়া গোসল করে। সন্ধা অনুমান ৬টার সময় তাহির আলী তাদের বাড়িতে যেতে বললে আমার ছেলে ২নং বিবাদী নিলুফা বেগমের দেওয়া টাকা দোকানের মালিক দিলু মিয়াকে টাকা দিয়া পুনরায় বিবাদীদের বাড়িতে যায়। রাত অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় ১নং বিবাদী তাহির মিয়া আমার পাশের ঘরের মোছাঃ মায়া বেগমকে ফোন দিয়ে আমার ছেলে রাহি আহমদ ওরফে সাইম বাড়িতে আছে কি না জানতে চায়।তখন মোছাঃ মায়া বেগম আমার ঘরে আসিয়া আমাকে আমার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করে। তখন ১নং বিবাদী তাহির মিয়া মোছাঃ মায়া বেগমের মোবাইলে ফোন করিলে , আমি তাহির মিয়ার সহিত মোবাইল ফোনে কথা বলি। তাহির মিয়া আমাকে আমার ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করিলে, আমি সাইম বাড়ীতে আসে নাই বলিয়া জানাই। তখন তাহির মিয়া বলে, তাহলে ছেলে তারেক আহমদ এর সহিত মনে হয় খেলতে বাহিরে গেছে।কিছু সময়ের মধ্যেই লোকজনের মুখে শুনতে পাই আমার ছেলে বিবাদীদের বাড়িতে গলায় উড়না পেচিয়ে ফাঁস দিয়েছে। উক্ত সংবাদ পাইয়া আমরা বর্ণিত সাক্ষীসহ বিবাদীদের বাড়িতে যাইয়া ১নং বিবাদী তাহির মিয়ার বসতঘরের উত্তর পাশের কক্ষের ছাদের রডের হুকের সাথে ঝুলানো অবস্থায় দেখতে পাইয়া উপস্থিত সবাইকে আমার ছেলেকে নামানোর জন্য বলিলে লোকজন উড়না কাটিয়া আমার ছেলেকে নামাইয়া দ্রুত বিশ্বনাথ সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলে রাহি আহমদ ওরফে সাইমকে মৃত ঘোষনা করে। তখন আমরা আমার মৃত ছেলেকে নিয়ে পুনরায় বিবাদীদের বাড়িতে নিয়া যাই। আমার ছেলে রাহি আহমদ ওরফে সাইমকে বিবাদীগন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সকলে যোগসাজশে গত ২৭ নভেম্বর রাত অনুমান ছয় ঘটিকা থেকে নয় ঘটিকার মধ্যে হত্যা করিয়া ১নং বিবাদী তাহির মিয়ার বসতঘরের উত্তর পাশের কক্ষের ছাদের রডের হুকের সাথে ঝূলাইয়া রাখে। আমার ছেলে রাহি আহমদ ওরফে সাইম এর লাশ পোষ্ট মর্ডাম শেষে দাফন করিয়া আত্মীয় স্বজনের সহিত আলাপ আলোচনা করিয়া বিবাদীদের বিরুদ্ধে অত্র এজাহার দায়ের করিতে সামান্য বিলম্ব হইল।
এদিকে বিশ্বনাথে চাচার বসতঘরে কিশোর সাইমের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘঠনার পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে তার বাবার আপন চাচাতো ভাই একই গ্রামের মৃত হাজী মোঃ মৃত তৈমুছ আলীর পুত্র তাহির মিয়া (৩৭), তাহির মিয়ার বোন নিলুফা বেগম (৩৪) এবং স্ত্রী
রুবিনা বেগম (৩০)কে বিশ্বনাথ থানার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। ঐদিন রাতে এই তিনজনকে আসামী করে ও আরো ২/৩ জনকে অজ্ঞাত নামা রেখে নিহতের মা রত্না বেগম প্যানেল কোড ১৮৬০ এর ৩৪/৩০২ ধারামতে একটি মামলা দায়ের করেন।মামলা নং ১২। শুক্রবার কোর্টের মাধ্যমে উপরোক্ত তিন জনকে আসামী দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আব্দুল হান্নান উপরোক্ত মৃত্যুর রহস্য উদঘাঠন, অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামী সনাক্ত করণ ও গ্রেফতার এবং মৃত ব্যক্তির মোবাইল উদ্ধার এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধারের জন্য ৩জনকে ৫দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছেন।