সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ এখন ঐক্যের বাংলাদেশ, হিন্দু- মুসলিম সবার বাংলাদেশ। সেকারণেই ভাই- ভাইয়ের পাশে দাঁড়াবে, ভাই ভাইকে চিনবে, এটা এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি, এটা মনে রাখতে হবে। ভারতের গণমাধ্যম অনেক মিথ্যাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে সত্য-ই আমাদের একমাত্র হাতিয়ার। যে ঘটনা ঘটেছে তা আমরা স্বীকার করবো, তার প্রতিবিধানের চেষ্টা করবো। তাহলেই গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা এর জবাব দেওয়া হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি দল শনিবার দোয়ারাবাজারে মোঙলারগাঁওয়ের ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু বাড়ি-ঘর পরিদর্শন করার সময় গণমাধ্যম কর্মীদের এসব কথা বলেন- কমিটির সদস্য আইনজীবী মানজুর আল মতিন।
তিনি বলেন, ভারতের গণমাধ্যম যে মিথ্যাচার করছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে সত্য-ই হবে আমাদের একমাত্র হাতিয়ার। তাই ঘটনা স্বীকার করে প্রতিবিধান করে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
দোয়ারাবাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে কিছু হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে, হামলার চিহৃ এখনো রয়েছে। আমরা চাই এই ধরনের ঘটনা আর কখনোই না ঘটুক। ভারতীয় গণমাধ্যম সংখ্যা বাড়িয়ে বলছে, ক্ষতির পরিমাণও বাড়িয়ে বলছে।
সরেজমিনে আসলে হামলার বিষয়টি পরিষ্কার হবে। মানুষের বাড়িতে হামলা, মানুষকে অনিরাপদ করা, তাদের শিশুসহ পালিয়ে যাওয়া এটা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে হতে পারে না। এরা আগেও দীর্ঘদিন সম্প্রতির সাথে বসবাস করছিলেন। কারা এই ঘটনার পেছনে ইন্দন দিচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করা জরুরি। এটার পেছনে আরও শক্তি রয়েছে। কারা এই মানুষগুলোকে উত্তেজিত করেছে, একজায়গায় জড়ো করছে, কারা জড়ো করে নিয়ে আসছে, এরা কারা। কারা বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, কারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
এসময় জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষে আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ছাড়াও চিকিৎসক তাসনীম জারা, চিকিৎসক ও অ্যাকটিভিস্ট তাজনূভা জাবীন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাবেক সদস্য প্রীতম দাশ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের মোঙলারগাঁওবাসীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ গত মঙ্গলবার বড় অঘটন থেকে রক্ষা পেয়েছেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা দোয়ারাবাজার কলেজের হিন্দু শিক্ষার্থী আকাশ দাসের ফেইসবুক আইডি থেকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান অবমাননার কমেন্ট করা হলে এই উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে এলাকার আলেম ওলামা, রাজনৈতিক কর্মী, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় হাজারো উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত্ব করা হয়। রাতভর উত্তেজনা চলাকালে মোঙলারগাঁওয়ে কয়েকটি বসতঘর ভাংচুর হয়। গ্রামের ৯৫ টি হিন্দু পরিবারের অন্যরাও বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছিলেন। দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরে কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুটি পারিবারিক ম-প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকটি দোকানের সাটারের ক্ষতি করা হয়। পুলিশ ওই দিন সন্ধায়ই আকাশ দাসকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।
আকাশ দাসের বিরুদ্ধে দোয়ারাবাজার থানার সাবইন্সপেক্টর আরাফাত ইবনে শফিউল্লা বাদী হয়ে মামলা (সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট- ২৮/২. ৩২/২, ৩৩/২, দ-বিধির ১৫৩, ৫০৪ ও ৫০৫-খ ) দায়ের করেছেন।