নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় চার মাসের কাছাকাছি সময় থেকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে দেশের অন্য খাতের সঙ্গে ক্রীড়াঙ্গনও ছিল বেশ আলোচিত-সমালোচিত। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কারে কমিটিও হয়েছে এই সময়ে। কিন্তু তার পরও সিলেটে কাটেনি স্থবিরতা।
গত প্রায় চার মাসে ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু সাফল্যও এসেছে। মেয়েদের সাফ জয়, অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল দলের দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা হওয়ার সঙ্গে দুদিন আগে মালদ্বীপকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটে ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হলেও পাকিস্তানের মাঠে পাকিস্তানকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করা ছিল বাংলাদেশের বড় অর্জন।
তবে সব যেন ম্লান করে দিচ্ছে জেলা-উপজেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর স্থবিরতা। জেলার খেলাধুলার মূল চালিকা শক্তি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জাতীয় পর্যায়েও জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে অংশ নেয় জেলাগুলো। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যেই তা ভেঙ্গে দেন। সবার মতো ভেঙ্গে যায় সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিও। একইসাথে বিভাগীয়, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং জেলা-বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিও ভেঙে দেয়া হয়।
দীর্ঘ সময় থেকে অনেকটা বলপ্রয়োগ করেই ঐতিহ্যবাহী সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। আওয়ামীলীগ সরকারের প্রায় পুরোটা সময়ই তারা ছিলেন সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনের সর্বময় কর্তা। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও আক্ষেপ জমা আছে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্ট অনেকের মাঝে। ক্ষমতার পালাবদলের পর তারাও চলে যান সময়ের আড়ালে।
সব শেষ গত ২১ আগস্ট অ্যাডহক কমিটি গঠনের একটি রূপরেখা প্রদান করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এতে কিভাবে ক্রীড়া সংস্থাগুলোর এডহক কমিটি গঠন করতে হবে সে নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে কমিটিগুলো ৭ সদস্যের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে কারা থাকবেন তারও একটা গাইডলাইন দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার আহবায়ক হবেন পদাধিকার বলে বিভাগীয় কমিশনার। সদস্য সচিব যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক। জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহবায়ক হবেন জেলা প্রশাসক। সদস্য সচিব জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আহবায়ক হবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সদস্য সচিব উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। প্রত্যেকটি কমিটি হবে ৭ সদস্যের। প্রতিটি কমিটিতে সদস্য থাকবেন ৫ জন। তাদের মধ্যে দুইজন হবেন সরাসরি ক্রীড়া সম্পৃক্ত ব্যক্তি। যেমন খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি। স্থানীয় প্রেক্ষাপটে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ক্রীড়ানুরাগী কিংবা ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে হবেন একজন সদস্য। ক্রীড়া সম্পৃক্ত সংগঠক বা ছাত্র প্রতিনিধি থাকবেন একজন। আরেকজন সদস্য হবে ক্রীড়া সাংবদিক।
এরই মধ্যে প্রশাসনিক রদবদলে সিলেট জেলায় ডিসি-বিভাগীয় কমিশনার পরিবর্তন হলো। কিন্তু ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কমিটি গঠন যেন সুদূর পরাহতই রয়ে গেলো। অদৃশ্য কারণে কমিটি গঠনে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গুরুত্বপূর্ণ সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থারও পূর্ণাঙ্গ অ্যাডহক কমিটি গঠন হয়নি এখনো। অফিস সহকারীদের দিয়েই চলছে সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার নামে মাত্র কার্যক্রম। কিছুদিন আগে অনুর্ধ্ব-১৫ ডেভেলপমেন্ট কাপ ফুটবল হয়েছে সিলেটে। বর্তমানে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নারী টি-২০ সিরিজের খেলা চলছে। কিন্তু এসব খেলা যেন জৌলুসহীন!
পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় ও গণতান্ত্রিক ধারায় ক্রীড়া সংস্থা না ফেরায় প্রথম ফুটবল-ক্রিকেটসহ অন্যান্য এসোসিয়েশনগুলোও কাজ করছেনা ঠিকভাবে। প্রথম বিভাগ লীগ, দ্বিতীয় বিভাগ লীগসহ ফুটবল, ক্রিকেটের পাশাপাশি সব ক্ষেত্রেই অচলাবস্থা বিরাজ করছে। অনিশ্চিত হতাশায় রয়েছেন খেলোয়াড়-কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সবাই।
বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে আড়ালে নানাকাণ্ড ঘটছে। নানাভাবে তদবিরের পর তদবিরও চলছে। প্রকৃত সংগঠক-ক্রীড়া সাংবাদিক নন এমনও চেষ্টায় আছেন কমিটিতে ঢুকার। আর তদবিরের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন দায়িত্বরতরা-এমন খবরও আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা দ্রুত প্রকৃতদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ অ্যাডহক কমিটি চান। কারণ স্থানীয় পর্যায়ের ক্রীড়াঙ্গনে এ স্থবিরতা কোন শুভ ফল বয়ে আনবে না বলেও মনে করেন তারা।
সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও ক্রীড়াঙ্গনে পুরো স্থবিরতা কাটতে, পূর্ণাঙ্গ অ্যাডহক কমিটি গঠনে কেন এতো সময় লাগছে? কবে আসবে স্বাভাবিকতা- এ প্রশ্নের উত্তর চান তারা। তবে এসবের উত্তর দিবে কে?
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, যোগ্যতা সম্পন্ন লোক খোঁজা হচ্ছে, এডহক কমিটির হতে তাই দেরি হচ্ছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রজো-উন-নবী বলেন, আমি সিলেটে নতুন যোগদান করেছি। শীঘ্রই সবার সাথে বসে কমিটি চুড়ান্ত করা হবে।