নিজস্ব প্রতিবেদক : অবৈধভাবে অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন অভিযোগে ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া সিলেট আওয়ামী ও যুবলীগের পাঁচ নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে মেঘালয়ের একটি আদালত।
মঙ্গলবার মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম জৈন্তিয়া হিলস জেলার এমলারিয়াং বিচারিক আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এই পাঁচজন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল এবং সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছাতক উপজেলা যুবলীগ নেতা সাহাব উদ্দিন সাহেল।
জোয়াই পুলিশ স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর জে কে মাজাও সকাল সন্ধ্যাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে ডাউকি পুলিশ স্টেশনে গত ১৬ আগস্ট একজন ট্রাক ড্রাইভার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ১৯ আগস্ট মামলা হয়। এই মামলায় রবিবার পাঁচ জনকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জে কে মাজওয়া আদালতকে বলেন, “এজাহারে কোনও আসামির নাম উল্লেখ না থাকলেও তদন্তে ৯ বাংলাদেশির নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চার জন পলাতক।”
সাব ইন্সপেক্টর জে কে মাজাও জানান, এদের কারও বিরুদ্ধে কোনও ধর্ষণের অভিযোগ নেই। যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সেদুটি হলো ডাউকি থানায় হওয়া ভারতীয় ন্যায়-সংহিতার চারটি ধারা এবং বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারার মামলা হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এমলারিয়াং জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে যে ধারাগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো, ১৯ (১০)২৪ ইউএস, ১১৮(১)৩০৯(৪)৩১০(২)৩২৪(৪) বিএসএস এবং ১৪ ফরেইনার্স অ্যাক্ট।
জোয়াই আদালতের আইনজীবী রাম সিং সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, ছিনতাই, জাতীয় সড়কে ডাকাতি, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারাটি ভারতে বিদেশিদের অবস্থানকালে বিধান লঙ্ঘনের শাস্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। যার মধ্যে রয়েছে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করা, বৈধ নথি ছাড়া ভারতে প্রবেশ অথবা নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া।
এছাড়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা বিএনএসের ধারায় রয়েছে বিপজ্জনক অস্ত্র বা উপায় দ্বারা স্বেচ্ছায় কারও ক্ষতি করা, চুরি-ডাকাতি বা সহিংসতায় যুক্ত থাকা, স্বেচ্ছায় কারও ক্ষতি করা ইত্যাদি।
এগুলো সবই জামিন অযোগ্য অপরাধ। এ কারণেই শুনানি শেষে পাঁচ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন বিচারক।
জোয়াই অবস্থানরত সিলেটের একজন কয়লা ব্যাবসায়ী সকাল সন্ধ্যাকে জানান, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিধাননগর পৌরসংস্থার বাগুইআটি এলাকার একটি বাসা থেকে রবিবার সকালে পাঁচ জনকে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করে মেঘালয় পুলিশ। বাগুইআটি কলকাতা মেট্রোপলিটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেএমডিএ) আওতাধীন।
কলকাতায় অবস্থানরত সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা বলেন, “বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অল্প ক’টি স্থল সীমান্ত পারাপারের মধ্যে ডাউকি-তামাবিল একটি। এটি মূলত বাংলাদেশে কয়লা ও পাথর পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। ডাউকি এলাকায় পাথর ব্যবসা নিয়ে তাদের কারও কারও সঙ্গে স্থানীয়দের বিরোধ রয়েছে বলে শুনেছি। এ কারণে সংক্ষুব্ধ কেউ এ মামলার নেপথ্যে থাকতে পারেন।”
যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছেন এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই সিলেট কোতোয়ালি থানাসহ বেশ কয়েকটি থানায় মামলা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের এক নেতা জানিয়েছেন, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময় তারা সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং যান। শিলং শহরে তারা প্রথমে পুলিশ বাজার এলাকার একটি হোটেলে অবস্থান নেন। পরে তারা শহরের একটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। গত ৫ নভেম্বর তারা শিলং থেকে কলকাতায় চলে যান।
কলকাতায় অবস্থানরত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, “তারা ভারতে প্রবেশ করে শিলংয়ের লাইমক্রা পুলিশ স্টেশনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেন এবং ভারতে অবস্থানের অনুমোদন পান। এখন হয়রানি করতেই তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ, ছিনতাই ও গাড়ি ভাঙ্গচুরের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।”
বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার খবর প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সত্যাসত্য যাচাই না করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। মানুষের চরিত্র হনন করা অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয়। এটা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা হতে পারে না। তাদের ইমেজ ক্ষুন্ন করতে ও আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করতে ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনা ছড়ানো হয়েছে।”
স্থানীয় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে নাদেল বলেন, গ্রেপ্তার সবাই রাজনীতিক। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় তারা ভারতে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছেন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা মুক্তি পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন এই নেতা।