ছাতক প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ ছাতক রেলওয়ে বিভাগের রেলপথ, রজ্জুপথ ও কংক্রিট সিøপার প্লান্ট ধ্বংসের পথে। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে বিরাট অঙ্কের রাজস্ব। অনিয়ম-দুর্নীতি, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার এই বিভাগটি ধ্বংসের পথে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ছাতক শহরটি বৃট্রিশ আমল থেকে ব্যবসার কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে দেশ-বিদেশে বেশ পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে। এখানে ১৯৫৪ সালে স্থাপিত হয় ছাতক-সিলেট ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ। শুরু থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত যাত্রী সেবায় ট্রেন ছিল একনিষ্ঠ। ছাতক থেকে প্রতিদিন চারটি ট্রেন সিলেটে বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করতো। এগুলোর সাথে মালামাল পরিবহনের জন্য ৪টি বগিতে সিমেন্ট, পাথর, চুনাপাথর, তেজপাতা ও কমলা লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল কম খরচে পরিবহন করা হতো। ছাতকসহ সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর যাতায়াতের এক মাত্র প্রধান মাধ্যম ছিল এ ট্রেন পথ। অনিয়ম-দুর্নীতিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বিভাগটি আজ ধ্বংসের পথে। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ করোনা ভাইরাসের কারণে সারা দেশের সাথে এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এ পথে ট্রেন পুনরায় চালু হয়নি। এর মধ্যে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় রেল পথের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যা এখনো সংস্কার হয়নি। পাথর, সিøপারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে। ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশনসহ রেল বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনা অপরাধিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
ছাতক বাজার রেলওয়ে বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ সালে নির্মিত হয় ছাতক-ভোলাগঞ্জ ১৯ কিলোমিটার রোপওয়ে (রজ্জুপথ)। ভোলাগঞ্জে রেলওয়ের নিজস্ব খনি থেকে রেললাইনে ব্যবহৃত পাথরের চাহিদা মেটাতে ১২০টি ট্রেসেলের (এক ধরণের খুঁটি) উপর ভর করে পাথর পরিবহনের জন্য এ রজ্জুপথটি স্থাপিত হয়। রজ্জুপথে পাথর পরিবহনের জন্য ৪২৫টি বাকেট (পাথর ধারণের পাত্র) ছিল। এ বাকেটে চড়ে রজ্জুপথে ছাতক-ভোলাগঞ্জ যাতায়াত করতেন সংশ্লিষ্টরা। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সে সময় পাথর পরিবহনে সহজ উপায় ছিল এ রজ্জুপথ। সুরমা নদীর কূল ঘেঁষে ১২০টি ট্রেসেলের উপর এটি স্থাপনের পর কিছুদিন চালু থাকলেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ রজ্জুপথ পূনর্বাসন করে পুনরায় চালু হয়েছিল ১৯৮০ সালে। দীর্ঘ দিন চালু থাকে এ রজ্জুপথ। মাঝে মধ্যে যান্ত্রিত ক্রটিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে বন্ধ হলেও পরবর্তীতে চালু করা হতো। কিন্তু ২০১৩ সালে এসে থেমে যায় এটি। এর পর থেকে এখনো বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, ১৯৮৮ সালে ছাতকবাজার রেলওয়ে স্টেশনের পাশে ৬ একর জায়গা নিয়ে নির্মিত প্রি-স্ট্রেসড (এমজি) কংক্রিট সিøপার প্লান্টটি যান্ত্রিক ক্রুটি, কাঁচামাল সঙ্কটসহ বিভিন্ন অযুহাতে বন্ধ রয়েছে।
সিলেট রেলওয়ে বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পূর্ত) রেজাউল হক জানান, সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সিলেট-ছাতক রেল লাইনের সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। পূর্বের টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার দেওয়া হতে পারে। সংস্কার কাজ না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চালু হচ্ছে না।
বন্ধ হওয়া রজ্জুপথ, রেলপথ ও কংক্রিট সিøপার প্লান্ট দ্রুত চালু হলে ঐতিহ্যের ঠিকানা ফিরে আসবে, এমনটা প্রত্যাশা ছাতকবাসীর।