কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি : মোবাইলে চার্জ দেয়াকে কেন্দ্র কেরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে দুদিন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দিনভর দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল পুরো থানা সদর এলাকা। পরে সোয়া ২টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, এ ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতাদের নিয়ে একটি সালিশ কমিটি করা হয়। এই কমিটি দুই পক্ষকে নিয়ে বিচারের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে।
তবে সালিশ বৈঠকের আগে এ ঘটনায় আর কেউ উসকানি দিলে এবং তা প্রমাণিত হলে সেই পক্ষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের পর থেকে দুই পক্ষই এখন শান্ত।
সালিশ কমিটিতে রয়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া, কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানরা।
তেলিখাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়া বলেন, সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর আমরা দুই পক্ষকে নিয়ে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করি। ৫০ লাখ টাকা করে জামানত রেখে দুই পক্ষই বৈঠকে রাজি হয়েছে। যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তারা সুস্থ হলে সালিশ বৈঠকের দিন নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, আপাতত দুই পক্ষই এখন শান্ত। তবে কোনো পক্ষের কেউ ফেসবুকসহ কোনোভাবে উসকানি দিয়ে ফের সংঘর্ষ বাঁধালে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৫ডিসেম্বর) বিকেলে বর্ণি গ্রামের বাবুল মিয়া মোবাইল চার্জে দেন কাঠাঁলবাড়ী গ্রামের এক ব্যক্তির দোকানে। পরে সেটি নিতে চাইলে ওই দোকানি অস্বীকার করেন। এসময় মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এসময় কাঠালবাড়ি এলাকার লোকজন কে মারধর করেন।
এলাকাবাসী জানান, মারামারি দেখে কোম্পানীগঞ্জ গ্রামের সাবেক এক ইউপি সদস্যের ভাই এগিয়ে এলে তিনি আহত হন। এরপর এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বর্নি, কাঠালবাড়ি ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকার লোকজনের মধ্যে বাধে ত্রিমুখী সংঘর্ষ। একপর্যায়ে বর্নি ও কোম্পানীগঞ্জের লোকজন একপক্ষ হয়ে কাঠালবাড়ির লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন।
এ ঘটনার জেরে পরদিন রোববার সকাল ১০টায় বর্নি এলাকার লোকজন অন্তত ১০ কিলোমিটার হেঁটে মাইকিং করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বর্নি মাদরাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন কোম্পানীগঞ্জের লোকজনও। অপরদিকে নদীর ওপারে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেন কাঁঠালবাড়ি এলাকার লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এলাকার লোকজনকে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলায় অংশ নিতে মাইকে আহ্বান জানায় বর্নি গ্রামের লোকেরা। সেই সঙ্গে লোকজনকে মারামারিতে উদ্বুদ্ধ করতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মাইক বেঁধে স্লোগান দিতে দিতে সামনে এগিয়ে আসেন তারা।
অন্যদিকে, কাঁঠালবাড়ি গ্রামের লোকজনও প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় রণসাজে প্রস্তুত ছিল। দুপুর ১২টার দিকে সংঘর্ষে জড়ান উভয় গ্রামের লোকজন। এসময় বৃষ্টির মতো চারদিকে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বারবার চেষ্টা করেও সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে সিলেট থেকে সেনা সদস্যরা গেলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।
এ ঘটনায় দুদিনে পুলিশসহ ৭০জন আহত হন। দুজনকে গুরুতর অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বর্নি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দুই পক্ষকে নিয়ে সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকের আগে আর কেউ উসকানি দিলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, রোববার কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা কাজ করছেন। বর্তমানে দুই পক্ষই শান্ত। তবে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।