নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকারের বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের বিশেষ আগ্রহে জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা বনে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক শীর্ষক প্রকল্প ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিশেষ আগ্রহে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নানের নেয়া সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার সুনামগঞ্জ জেলার সাথে নেত্রকোনার সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে হাওরে এলিভেটেড এক্সপ্রেস বা উড়াল সড়ক নির্মাণের দুটো মেগা প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া বেশকিছু প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একইসাথে কম গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু প্রকল্প স্থগিত করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।

সব মিলিয়ে সারাদেশে অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক এবং অপ্রয়োজনীয় ৪০টি প্রকল্প বাদ দেয়া বা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এর মধ্যে রয়েছে সিলেট বিভাগের দুটো মেগা প্রকল্প। মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা বনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক শীর্ষক প্রকল্প ও সুনামগঞ্জ জেলার সাথে নেত্রকোনার সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণের প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের পঞ্চম একনেক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রাক্কালে অনুমোদিত একটি প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

কার্যতালিকা সূত্রে জানা গেছে, একনেক সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মোট ১৫টি প্রকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৮টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক অনুমোদিত ৬টি প্রকল্প একনেক সভাকে অবহিত করার জন্য উপস্থাপন করা হয়। বাকি একটি অনুমোদিত প্রকল্প বাতিলের জন্য প্রস্তাব করা হয়।

একনেক সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা বনে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক শীর্ষক প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গত বছরের নভেম্বরে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। অথচ লাঠিটিলা বনটি সংরক্ষিত হওয়ায় সেখানে সাফারি পার্ক স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। তাদের আপত্তি উপেক্ষা করে সাফারি পার্ক স্থাপনের জন্য নেয়া প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বছর পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ভেঙে পাহাড় ও গাছ কেটে তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিনের নিজের নির্বাচনী এলাকায় বন ধ্বংসের এমন উদ্যোগ নেয়া হয়। এ কারণে পরিবেশবাদীদের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকার। তবে সরকার পরিবর্তনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য গঠন করা হয় চার সদস্যের একটি কমিটি।

এদিকে, সিলেট বিভাগে বাতিলের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার সাথে নেত্রকোনার সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণের প্রকল্প। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের আগ্রহে নেয়া প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের এক সভায় প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, হাওরে উড়ালসড়ক নির্মিত হলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব পড়বে।