• ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে আসা পর্যটকদের আরামকে হারাম করে দেয় ভাঙা রাস্তা 

AMZAD
প্রকাশিত ২৫ ডিসেম্বর, বুধবার, ২০২৪ ১৮:২৮:০১
সিলেটে আসা পর্যটকদের আরামকে হারাম করে দেয় ভাঙা রাস্তা 

নিজস্ব প্রতিবেদক : পর্যটকদের আকর্ষণের তালিকায় সব সময় থাকে সিলেটের নাম। সেই সিলেটকে দেখার স্বাদ কখনো ফুরাবার নয়। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে এই মাটিতে পা রেখে শান্তি অনুভব করেন পর্যটকরা। কিন্তু সেই শান্তির পথে বরাবরই বাধা হয় অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে হোটেল মোটেলসহ সিলেটের অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশের মধ্যে অনুপম জনপদ সিলেট পর্যটকদের মনে যেভাবে সাড়া জাগায়, অন্য জেলার ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। দারুণভাবে বৈশিষ্টপূর্ণ এই সুন্দরই হয়তো সিলেটের গরিমা। সেই ভালোলাগা থেকে ১২ মাস সুযোগ না হলেও বছরে অন্তত একবার সিলেটে মানুষের ভিড় জমে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তারা ছুটে আসেন, ঘুরে দেখেন পছন্দের শহরের প্রাকৃতিকে।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শহর পর্যটকমুখর। অধিকাংশ হোটেল, মোটেল ব্যস্ত সময় পার করছে। বছরের অন্যসময় মন্দা থাকলেও ডিসেম্বরে কিছুটা সরব হয়ে ওঠে। শহরের অধিকাংশ হোটেল একমাস ধরে বুকিং দিয়ে রেখেছেন পর্যটকরা। তবে পর্যটকদের সিলেট দেখার সেই আনন্দকে ম্লান করে দেয় বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা।

সিলেট হোটেল গেস্ট হাউস ওনার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি, হোটেল ফরচুন গার্ডেনের কর্ণধার সুমায়েত নুরী চৌধুরী জুয়েল বলেন, ‘সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত ২১টি হোটেল, গেস্ট হাউস থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সিলেটে অন্তত চার শতাধিক হোটেল রয়েছে। বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে বিগত ছয় মাস আমরা সবাই কঠিন সময় পার করেছি। তারপর গেল পটপরিবর্তনের আন্দোলন। বর্তমানে সিলেটে প্রচুর পর্যটক আসা-যাওয়া করছেন ঠিকই; কিন্তু এই স্রোত আমরা ধরে রাখতে পারি না। তার অন্যতম কারণ-অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। দুই তিনটি পর্যটন স্পট ছাড়া অধিকাংশ এলাকায় একবার গেলে, দ্বিতীয়বার যাওয়ার ইচ্ছে হয় না।’

সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অনন্য সুন্দর জাফলংয়ের অবস্থান। যাকে প্রকৃতিকন্যসহ নানা নামে অভিহিত করা হয়। সিলেট শহর থেকে জাফলংয়ে যাওয়ার পথে বারবার মন খারাপ হয় শুধু সড়কের জন্য। আরামকে হারাম করে দেয় পথের সমস্ত যাত্রা।

পর্যটকদের ভালো লাগার আরেক নাম বিছনাকান্দি। গোয়াইনঘাট উপজেলার এই জায়গাটির যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই করুণ। সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল, সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় অধিকাংশ সময় হেলেদুলে যেতে হয়। দিনেরবেলা কষ্ট করে পৌঁছালেও ফেরার সময় থাকে সীমাহীন ঝুঁকি।

সম্প্রতি বিছনাকান্দি বেড়াতে যান চট্টগ্রামের এক খ্যাতনামা গাইনোকোলজিস্ট। যানবাহনযোগে অনেকটা হেলেদুলে তিনি সেখানে পৌঁছান। জানালেন, বিছনাকান্দি ভ্রমণ করে তার বিস্ময়কর অবস্থা হয়েছে। এ রকম রাস্তা সচরাচর চোখে পড়ে না বলে মন্তব্য এ চিকিৎসকের।

জিন্দাবাজার হোটেল গোল্ডেন সিটিতে উঠেছেন রাজশাহী থেকে আসা একটি পরিবার। তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম নামটি বিছনাকান্দি ছিল।পরের তালিকায় কোম্পানীগঞ্জের ‘সাদাপাথর’। শনিবার রাতে বিছনাকান্দি থেকে ফিরে পরিবারের একজন বলেন, জায়গা খুব সুন্দর। না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। তবে পুরোটা পথই মনে হয়েছে পরিবার নিয়ে যাওয়াটা নিরাপদ নয়। এক ধরণের ভয় কাজ করেছে। না জানি কখন গাড়ি উল্টে যায়-এমন অবস্থা।’

হেটেল গোল্ডেন সিটির জেনারেল ম্যানেজার মিস্টু দত্তর সঙ্গে পর্যটক নিয়ে কথা হয়। তিনিও যোগাযোগ ব্যবস্থার অবর্ণনীয় দুর্গতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, টেকসই উন্নয়ন না হলে পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে না কোনোদিন। পর্যটকরা একবার গেলে দ্বিতীয়বার হয়তো আর যাবে না।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, ‘শুধু পর্যটন এলাকা নয়, সিলেটের সবকটি সড়কের অবস্থা খারাপ। এসব দেখারও কেউ নেই। আগেও ছিল না।’

সড়কের অবস্থা বেহাল হলেও নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টির কথা জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহমুদ মুরাদ। তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ, টহল পুলিশ কাজ করছে। আমিও যোগাযোগ রেখেছি।’