• ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে এলজিইডি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা

AMZAD
প্রকাশিত ০২ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার, ২০২৫ ২১:৪৫:৫৪
সিলেটে এলজিইডি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটে মো. রফিকুল ইসলাম নামে এলজিইডির এক উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানহানির অভিযোগ এনে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন একজন ঠিকাদার।

বুধবার সিলেট যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে এই মামলাটি করেন জৈন্তাপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহান এন্টারপ্রাইজের মালিক আলহাজ্ব মো. ইসমাইল আলী আশিক।

অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বর্তমানে হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলায় এলজিইডির প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। বিগত সময়ে সিলেটের গোয়াইনঘাটে কর্মরত থাকাকালে সিটিংবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ প্রকল্পের বিল আটকে রাখা, ঘুষ দাবি ও গহণ এবং কাজ শেষ হওয়ার পরও প্রকল্পের বিল পরিশোধ না করে ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নের অপচেষ্টাসহ নানা অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় ঘুষের ৬ লক্ষ টাকা গ্রহনের অভিযোগ আনা হয় এলজিইডির প্রকৌশলী রফিকুলের বিরুদ্ধে। কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের বিল পরিশোধ না করে ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নের অপচেষ্টাও চালান তিনি। এছাড়া বিগত আওয়ামী আমলে মন্ত্রী ইমরানের ছত্রছায়ায় থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলার তৎকালীন এই এলজিইডির প্রকৌশলীর নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয় মামলায়।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা এলজিইডির আওতায় উপজেলার সিটিংবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মান কাজের টেন্ডার পায় মেসার্স শাহান এন্টার প্রাইজ। এক কোটি তেতাল্লিশ লক্ষ একান্ন হাজার তিনশত চুয়াত্তর টাকার এ কাজ নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে গত ১৭/০১/২০২২ইং তারিখে চুক্তি সম্পাদন হয়। বাদী প্রতিষ্ঠান পারফরম্যান্স সিকিউরিটি হিসেবে এনআরবিসি ব্যাংক বটেশ্বর শাখা কর্তৃক সাত লক্ষ আঠার হাজার টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান করেন।
অভিযোগে ঠিকাদার ইসমাইল আলী আশিক জানান, কাজ হাতে পেয়ে মেসার্স শাহান এন্টার প্রাইজ প্রাথমিকভাবে প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকার মালামাল ক্রয় করে পাইলিং ও বেইসের মাটি কাটার কাজ সম্পাদন করে। বেইজ ঢালাই কাজের প্রস্তুতি গ্রহণকালে ইতোপূর্বে সম্পাদিত কাজের বিল পরিশোধ করতে বলায় এলজিইডি প্রকৌশলী রফিকুল দশ লক্ষ টাকার ঘুষ দাবি করেন। বিভিন্ন ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় দুর্নীতিবাজ রফিকুল ঘুষের পরিমাণ ৬ লক্ষ টাকা ধার্য করেন। বিল না পেয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওয়া পরিশোধ ও ক্রয়কৃত নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য পরিশোধে বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ী ইসমাঈল আলী আশিক ঘুষের এক লক্ষ তের হাজার টাকা নগদে পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে দুটি চেকের মাধ্যমে আরো চার লক্ষ সাতাশি হাজার টাকা প্রকৌশলী রফিকুলের কথামতো তার হিসাব রক্ষক নাসিম শিকদারকে প্রদান করেন।
একপর্যায়ে চেকের মাধ্যমে টাকা নগদায়ন করতে না পেরে ঘুষের টাকা আদায়ে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেন রফিকুল। তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চাপ সৃষ্টির জন্য বারবার নোটিশ প্রদান ও ব্যাংকে গচ্ছিত গ্যারান্টির টাকা আত্মসাতের অপচেষ্ঠা করেন। নোটিশের জবারে ২০২২ ও ২০২৩ সালের বন্যায় ভারতীয় সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট এলাকা প্লাবিত থাকার বিষয়টি অবহিত করেন। বিষয়টি বিবেচনা করে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মনিটরিং) নির্মাণ কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা দ্বারা প্রকল্প কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি হলেও মেসার্স শাহান এন্টার প্রাইজের প্রতি আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি মেসার্স শাহান এন্টার প্রাইজের লাইসেন্স ২ বছরের জন্য স্থগিত করে দেন। ধূর্ত রফিকুল ব্যাক গ্যারান্টির ৭ লক্ষ ১৮ হাজার টাকাও ব্যাক থেকে উঠিয়ে নেন। ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ এলজিইডি কর্মকর্তা কর্তৃক লাইসেন্স স্থগিত হলে নানামুখী জটিলতার মুখেমুখি হতে হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
আদালতে দায়েরকৃত মামলায় এলজিইডি কনট্রাক্টার ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি ইসমাঈল আলী আশিক উপজেলার এই ঘুষখোর প্রকৌশলীর এমন অন্যায় ও অপকর্মের দ্বারা আর্থিকভাবে ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিষয় তুলে ধরেন। মামলায় অভিযোগ করে তিনি বলেন, গোয়াইনঘাটে কর্মরত থাকাকালে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ রফিকুল সিলেটের মন্ত্রী ইমরানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। মন্ত্রী ইমরানের মদদপুষ্ঠ হওয়ার ফলে গোয়াইনঘাটে এলজিইডির সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে ঘুষ বানিজ্যে মেতে ওঠেন প্রকৌশলী রফিকুল। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্জিত টাকায় রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। অবৈধ টাকায় শিবগঞ্জে ফ্লাট, গ্রামের বাড়ীতে নিজ ও স্ত্রীর নামে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন ঘুষখোর রফিকুল। অসৎ এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত চলমান রয়েছে।
বাদীপক্ষ এ মামলায় তাদের প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির জন্য ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এ ঘটনায় বাদীপক্ষ আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ব্যবসায়িক সুনামহানি এবং টেন্ডারে অংশ নেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এদিকে, এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে এ ঘটনাকে প্রশাসনিক দুর্নীতি ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। সচেতন মহল মনে করছেন মামলাটি শুধু আর্থিক ক্ষতিপূরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং এটি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এ ঘটনাটি প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার অভাবের বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হতে পারে।