• ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

সিলেটে ২০০ চা শ্রমিককে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা একডো’র

AMZAD
প্রকাশিত ১৭ জানুয়ারি, শুক্রবার, ২০২৫ ১০:৪৫:৩৯
সিলেটে ২০০ চা শ্রমিককে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা একডো’র

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ন্যাশনাল টি কোম্পানির কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সাধারণ চা-শ্রমিক প্রায় দীর্ঘ চার মাস যাবত তাদের কোনপ্রকার বেতন ভাতা বা মজুরি পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় বিশেষ করে চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠী বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে স্থানীয় বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো) তার আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা গ্লোবাল ফান্ড ফর চিলড্রেন (জিএফসি) এর সহযোগিতায় সিলেট সদর উপজেলার ন্যাশনাল টি কোম্পানির দলদলি এবং কেওয়াছড়া চা-বাগানের ২০০ দুস্থ চা-শ্রমিক পরিবারকে এই খাদ্য সহায়তা প্রদান করে।

বৃহস্পতিবার ( ১৬ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় সিলেট সদর উপজেলা প্রাঙ্গণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খুশবো রুবাইয়াৎ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি থেকে চা-শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন।

আয়োজকরা জানান, চা-শ্রমিকদের জন্য দেয়া প্রতিটি ব্যাগে ছিল ১৫ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি মসুর ডাল, ২ কেজি ছানা ডাল, ২ লিটার তেল, ৩ কেজি পেয়াজ, ১ কেজি লবণ।

খাদ্যসামগ্রী নিতে আসা দলদলি চা-বাগানের চা-শ্রমিক নিয়তি বাউরি বলেন, আমাদের চা-বাগানের প্রায় সব বাড়িতেই এখন রীতিমতো দুর্ভিক্ষ চলছে। কারণ আমরা প্রায় বিগত চারমাস ধরে কোনপ্রকার মজুরী পাচ্ছি না। কিছুদিন পূর্বে কোম্পানির পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহের মজুরী প্রদান করা হলেও এখন আবার বন্ধ রয়েছে। একডো’র এই সহায়তা আমাদের এই কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

কেওয়াছড়া চা-বাগানের জোনাকি দাশ বলেন, আমার পরিবারে ছয়জন সদস্য। স্বামী অসুস্থ। চার সপ্তাহ ধরে বেতন বন্ধ। এর আগে আরও আট সপ্তাহ বেতন বন্ধ ছিল। মাস দুয়েক ধরে বাচ্চাদের তিনবেলা পেট ভরে খাবার দিতে পারি না। তারা যে খাবারগুলো দিলে এতে আমার অনেক উপকার হবে। অন্তত কয়েকদিন নিশ্চিন্তে খাবার খেতে পারবো।

দলদলি চা বাগানের শ্যামলী দাশ বলেন, ১৭৮ টাকা বেতন দেওয়া হয় আমাদের। সেই বেতনও বন্ধ অনেক দিন হয়ে গেছে। আমারা কিভাবে বেচে আছি বাগান মালিক খবরও নেয় না। আমার পরিবারে ৫ জন সদস্য। বাগানের মজুরির টাকা দিয়েই কোনোভাবে সংসার চলতো। কিন্তু বেতন বন্ধ হওয়ায় এখন আমরা দিশেহারা। পাতা তোলা ছাড়া আর কোনো কাজও আমরা পারি না। আমাদের শিক্ষাও নাই যে চাকরি করবো। তাই খেয়ে না খেয়ে বাগানেই পরে আছি। বাগান মালিক খবর না রাখলেও তারা আমাদের ঘরের খবর জানেন। সেজন্য আজকে স্যাররা খাবার দিচ্ছে। তাই অনেক খুশি লাগছে।

খাদ্য সহায়তা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, সরকার চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীর বর্তমান সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত আন্তরিক এবং এ বিষয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি অচিরেই এ সমস্যা সমাধান হবে। তাছাড়া তিনি চা-শ্রমিকদের এই দুর্দিনে তাদের পাশে থাকার জন্যে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ বলেন, বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আমরা কাজ করি। সে সুবাদে এই চা শ্রমিকদের জীবনযুদ্ধ আমরা সবসময় দেখি। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ন্যাশনাল টি কোম্পানির কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সাধারণ চা-শ্রমিক প্রায় দীর্ঘ চার মাস যাবত কোনপ্রকার বেতন ভাতা বা মজুরি পাচ্ছেন না। তাই তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একডোর সহযোগী সংস্থা গ্লোবাল ফান্ড ফর চিলড্রেন (জিএফসি) এর সহযোগিতায় সিলেট সদর উপজেলার ন্যাশনাল টি কোম্পানির দলদলি এবং কেওয়াছড়া চা-বাগানের ২০০ দুস্থ চা-শ্রমিক পরিবারকে কিছু জরুরী খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। এই খাবার যেন তারা গাড়ি ভাড়া দিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেজন্য সবাইকে নগদ ১০০টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী প্রদান এবং পূর্বের ন্যায় নিয়মিত মজুরী নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়া খাদ্য সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি কর্মী জাফর সাদেক শাকিল, সুবর্ণযাত্রার সভাপতি সংস্কৃতি কর্মী হুমায়ুন কবির জুয়েল, স্থানীয় টুকের বাজার ইউনিয়নের সদস্য আবুল কাশেম।