
সিলেটের ওসমানীনগরে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে মো. মোজাম্মেল মিয়া ওরফে মুজাম্মিলের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে রায়ে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও বিশেষ দায়রা জজ স্বপন কুমার সরকার এই রায় ঘোষণা করেন।
অত্র আদালতের পিপি মো. আবুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত মো. মোজাম্মেল মিয়া মুজাম্মিল ওসমানীনগর উপজেলার দক্ষিণ কলারাই গ্রামের মৃত জিলু মিয়ার ছেলে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে যুগনীবিলে একটি অজ্ঞাত মরদেহ অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওইদিন রাত ৮টার দিকে ওসমানীনগর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাঈন উদ্দিন ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র তৈরি করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন।
সুরতহাল প্রতিবেদনে উঠে আসে হত্যার নৃশংস চিত্র— নিহতের মস্তক নেই, দুই স্তন ও বুকের মাংস বিচ্ছিন্ন, দুই হাঁটুর উপরের মাংস কেটে অন্য কোথাও ফেলা হয়েছে। পুলিশ আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেও দেহের বিচ্ছিন্ন অংশগুলো খুঁজে পায়নি। তবে ধারণা করা হয়, মরদেহটি কোনো নারীর। পরে মরদেহ উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। এরপর ৩ ডিসেম্বর ওসমানীনগর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলার বরাত দিয়ে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি মো. আবুল হোসেন বলেন, “ক্লুলেস মামলাটির তদন্তকালে নিহতের স্বামী আসামি মো. মোজাম্মেল মিয়া ওরফে মুজাম্মিলকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাক্ষীদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি স্বীকার করেন, তার স্ত্রী সন্ধ্যা ওরফে শাহনাজ বেগমকে হত্যার পর মরদেহ সেখানে ফেলে দেন। মাথাসহ দেহের বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়, যা তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে শনাক্ত করে দেন।”
তিনি আরও বলেন, “পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন— নিহত শাহনাজ বেগম আগে খ্রিস্টান ছিলেন এবং মৌলভীবাজার আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার বাড়ির কোনো ঠিকানা ছিল না। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি যেতে চাইলে স্বামী তাকে তালাক দিয়ে যেতে বলতেন। পরে বাড়িতে নিয়ে গেলে তার মা তাকে রাখতে রাজি হননি। এই ক্ষোভ থেকেই তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেন।”
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে মামলাটি ২০২২ সালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় এবং চার্জ গঠনের পর মামলায় ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।
আসামির পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী রফিক আহমদ।