• ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের

AMZAD
প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার, ২০২৫ ১২:৪৬:০৫
কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের

রাজনৈতিক দলকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এক প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর আরও স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়াও র‍্যাব বিলুপ্ত করা এবং সামরিক বাহিনীর কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) সদস্যরা বাংলাদেশে এসে ওই তদন্ত করেছিল।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া প্রমাণগুলোর সমন্বয় করে ওএইচসিএইচআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরও হাজার হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ ও র‍্যাবের তথ্য অনুযায়ী ১১ হাজার ৭০০ জনকে তখন আটক করা হয়েছিল। যারা নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা শিশুরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার ও পঙ্গু হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তখন পদ্ধতিগত ও সংগঠিতভাবে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অংশ হয়ে উঠেছিল।

জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার এবং ওই সময়ের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণও পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। ওই বিক্ষোভে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয় কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের নির্দেশেই বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক জনবিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে আওয়ামী লীগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নৃশংসতা চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এসব ঘটনায় অধিকতর ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তৎকালীন সরকার এবং তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা, আওয়ামী লীগ, এর সহিংস গোষ্ঠী ও সংগঠনের সঙ্গে একত্রিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। যার মধ্যে রয়েছে কয়েকশ বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকাণ্ড, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গুরুতরভাবে শারীরিক নিপীড়ন ও বলপ্রয়োগ, ব্যাপক হারে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতনসহ অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন। ওএইচসিএইচআর যুক্তিসংগত কারণে বিশ্বাস করে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা, সমন্বয় ও নির্দেশনায় এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছিল।’

এতে বলা হয়েছে, অনেক অভিযানে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশের সহিংস প্রচেষ্টাকে সাহায্য করতে অভিযান শুরুর আগেই সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল অথবা পুলিশ ফোর্সের পেছনে থেকে আক্রমণে অংশ নিয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও লোকজনকে থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছিল, বিক্ষোভকারীদের আটক করেছিল এবং সংগঠিত ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল।

ওএইচসিএইচআরের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন ওই সময়কালে ঘটে যাওয়া লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের গুরুতর মাত্রা এবং তাদের অন্তর্নিহিত মূল কারণগুলো দূর করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ এবং উল্লেখযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের প্রয়োজন, যাতে একই ধরনের গুরুতর লঙ্ঘন পুনরায় না ঘটে। এই লক্ষ্যে ওএইচসিএইচআর এই প্রতিবেদনে বিশদ বিভিন্ন পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা ও বিচার খাতের সংস্কার, অনেক দমনমূলক আইন ও নীতি বাতিল, অন্যান্য আইনকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানসম্পন্ন করার জন্য সংশোধন, প্রাতিষ্ঠানিক ও শাসন খাতের সংস্কার, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বৃহত্তর পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সুশাসন, যাতে বাংলাদেশের সব মানুষের অন্তর্ভুক্তি ও মানবাধিকার সুরক্ষা ও সম্মান নিশ্চিত হয়।

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, তাদের প্রতিবেদন এবং সুপারিশগুলো বাংলাদেশে এবং অনলাইনে ভুক্তভোগী ও অন্যান্য সাক্ষীদের সঙ্গে পরিচালিত ২৩০টিরও বেশি গভীর সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। সরকার, নিরাপত্তা খাত এবং রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরও ৩৬টি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রাসঙ্গিক ঘটনাগুলোর প্রত্যক্ষ জ্ঞান রয়েছে এমন অনেক সাবেক ও বর্তমান জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রয়েছে। প্রমাণীকৃত ভিডিও ও ফটো, মেডিকেল ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও অস্ত্র বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে অনুসন্ধানগুলো সংগতিপূর্ণ এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি ঘটনা বা আচরণের ধরন ঘটেছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত ভিত্তি আছে; এমনভাবে ওএইচসিএইচআর অনুসন্ধান করেছে। প্রমাণের এই মানটি ফৌজদারি কার্যধারায় অপরাধ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় মানদণ্ডের চেয়ে কম, তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দ্বারা আরও ফৌজদারি তদন্তের সুযোগ রয়েছে।