
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামি ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপালো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দোষারোপ করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা। যদিও এমন ঘটনায় দুঃখপ্রকাশও করছে ছাত্রদল। কুয়েটের ঘটনাসহ এখন পর্যন্ত যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সবগুলোই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব হিসেবে আখ্যা দেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) সেই কাজ শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব। এটির নেতৃত্ব দিয়েছে কুয়েটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ওমর ফারুক। কেন্দ্রীয়ভাবে সেটি মনিটরিং করেছে হাসনাত আব্দুল্লাহ।’
নাছির উদ্দীন নাছির আরও বলেন, ‘ছাত্রদলের রাজনীতির অংশ হিসেবে কুয়েটে আমরা সদস্য ফরম বিতরণ করেছি। কিন্তু ফরম বিতরণের দুইদিন পরে ছাত্রদলের তিনজন নেতা-কর্মীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ওমর ফারুকের নেতৃত্বে শিবিরের সন্ত্রাসীরা অমানবিক নির্যাতন করেছে। নির্যাতনের মাত্রা এতই ছিল যে তারা দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়ে হামলা করেছে। পরে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথিত ছাত্রদলের অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপর ছাত্রদলের নামে একধরনের মব তৈরি করা হয়েছে।’
কুয়েটে শিবিরের কোনো কমিটি আছে কি-না এবং এ ঘটনায় ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি তোলেন নাছির উদ্দীন নাছির। একই সঙ্গে কোনো ক্যাম্পাসে যদি বিনা কারণে হামলার ঘটনা ঘটে, তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দায় নিতে হবে- বলে উল্লেখ করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।
লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে একটি সরেজমিন তদন্ত টিম খুলনা গেছেন। তাদের প্রতিবেদন ও পুলিশি বা প্রশাসনিক তদন্ত প্রতিবেদন আসার আগ পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকেই কোনো উপসংহার টানা সম্ভব বা সমীচীন নয়। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন, ছবি ও ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট শাখার আহ্বায়কের উস্কানিতেই হামলার সূত্রপাত ঘটেছে।’
হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তাদের সকলকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রদল তার সংগঠনের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আসলে কিংবা তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে কিন্তু তার বিচারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’
ওই সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অর্ধশত শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় উপাচার্য, উপউপাচার্য ও ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল থেকেই তারা কুয়েট মেডিকেল সেন্টারের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর বিক্ষোভ মিছিলসহ প্রশাসনিক একাডেমিক ভবনে প্রবেশপথের ফটকে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৮তম বিশেষ জরুরি সভায় কুয়েট সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।