• ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

এমসি কলেজ শিক্ষার্থীর উপর শিবিরের হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

AMZAD
প্রকাশিত ২২ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, ২০২৫ ১৬:০০:৫০
এমসি কলেজ শিক্ষার্থীর উপর শিবিরের হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

সিলেটের এমসি কলেজের শিক্ষার্থী ও তালামিয কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদকে শিবির কর্মীদের মারধরের অভিযোগের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের সংঘর্ষ নিয়ে ফেসবুকে কমেন্টের জেরে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। তখন গুরুতর আহত অবস্থায় রিয়াদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিয়াদ এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকের ১০১ নং কক্ষের থাকেন তিনি।

রিয়াদ অভিযোগ করেন, বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে কলেজ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জওহর লুকমান মুন্নার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২জন শিবিরকর্মী তাকে মরধর করে।

তিনি বলেন, মারধরের সময় হামলাকারীরা রিয়াদকে জিজ্ঞেস করেন, কুয়েটের ঘটনায় তুই শিবিরকে নিয়ে কী লিখেছিস? এরপর কোনো উত্তরের তোয়াক্কা না করেই, রিয়াদকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন শিবিরকর্মীরা। এক পর্যায়ে পাশের রুম থেকে রড নিয়ে রুমে প্রবেশ করে নাজমুল ও সালমান। রিয়াদের রুমমেট জুনেদ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে রুমের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। দরজা লাগিয়ে রড দিয়ে বেধড়ক পিটানো হয় রিয়াদকে।

এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি। সিলেট শাহপরাণ থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এই ঘটনায় আমাদের কাছে এখনো কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। করলে আইনানুগ ব‍্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, আমরা হাসপাতালে গিয়ে আহত ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছি। তার শারীরিক অবস্থা আগের থেকে ভালো। ঘটনার তদন্তে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে এই হামলার ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে সিলেট মহানগর ছাত্র শিবির। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, এমসি কলেজে মধ্যরাতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় ছাত্র শিবিরকে জড়িয়ে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা খুবই আপত্তিকর, অশোভন এবং বিব্রতকর। এই হামলায় শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা যার সঙ্গে ঘটেছে তিনি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজনের সঙ্গে ব্যক্তিগত রেশারেশি নিয়ে হামলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরে নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী যুগের মত ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার যে রাজনীতি তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি পুরনো কায়দায় এখানেও একটি পক্ষ ঘটনার পরেই কোনো তদন্ত, তথ্য-প্রমাণাদি ছাড়াই দোষারোপের রাজনীতি বেছে নিচ্ছেন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যদি এ ব্যাপারে ছাত্রশিবিরের কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে হামলার শিকার ব্যক্তি ও তার সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার নেতারা বলছেন, শিবিরের পক্ষ থেকে এই ঘটনা নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম মনোয়ার হোসেন বলেন, যারা হামলা করেছে তারা চিহ্নিত শিবিরকর্মী। কিন্তু শিবির এটা নিয়ে মিথ্যাচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সত্য কোনো দিন চাপা থাকে না। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষও শিবিরের ভয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। তারা শিবিরের পদধারী, তাদের চিনেও তাদের সাধারণ শিক্ষার্থী ট্যাগ দিচ্ছে।

এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ও রাতে সিলেট নগরীতে ছাত্রদল সিলেট শাখা ও বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া সিলেট মহানগরীর উদ্যোগে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি করা হয়।