• ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

এমসি কলেজ শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনায় জামায়াতের দায় স্বীকার, শিবিরের আপত্তি

AMZAD
প্রকাশিত ২৪ ফেব্রুয়ারি, সোমবার, ২০২৫ ১২:৩৭:০৭
এমসি কলেজ শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনায় জামায়াতের দায় স্বীকার, শিবিরের আপত্তি

সিলেটের মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদের উপর হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জামায়াত ইসলামী। এই হামলার সাথে ছাত্র শিবিরের কিছু কর্মী জড়িত বলে জানিয়েছে জামায়াতের সিলেট জেলা আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। হামলার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছেন তিনি।

তবে জামায়াতের সিলেট মহানগর আমিরের দায় স্বীকারমূলক এমন বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছে ইসলামী ছত্রিশিবিরের সিলেট মহানগর শাখা। হামলার সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়িত করার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জামায়াতের মহানগর আমিরের বক্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়েছে।

রোববার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি দাবি করে সিলেট মহানগর শিবির। এরআগে রোববার সন্ধ্যায় সিলেটকেন্দ্রিক দল আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র সাথে বৈঠক করেন জামায়াত নেতারা। বৈঠক শেষে জামায়াত ইসলাম সিলেট মহানগরের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম এমসি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াদের উপর হামলার সাথে শিবিরের কিছু কর্মী জড়িত বলে স্বীকার করেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থী রিয়াদ আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র ছাত্র সংগঠন তালামিযে ইসলামিয়ার নেতা।

রোববার রাতে সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নাঈম হোসাইন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ এবং মহানগর সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘সিলেটের এমসি কলেজে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে হাতাহাতির ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ফায়দা হাসিল করতে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে আসছে। আজ (রোববার) সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের প্রদত্ত একটি বক্তব্য আমাদের নজরে আসে। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় দিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ইতিমধ্যে দেশবাসীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সিলেট মহানগর জামায়াতের আমিরও এ অপপ্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে আমরা মনে করছি। আমরা অবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

এরআগে রোববার সন্ধ্যায় আঞ্জুমানে আল ইসলাহর সাথে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সাথে আলাকালে হামলায় শিবিরের দায় স্বীকার করে জামায়াত আমির বলেন, ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে সেখানে (এমসি কলেজে) যে বাড়াবাড়িটুকু হয়েছে, আমাদের দৃষ্টিতে সেখানে ছাত্রশিবিরের কিছুসংখ্যক কর্মী এটার সাথে জড়িত। এবং যেটা করেছে সেটা অন্যায়ভাবে করেছে এবং সেটা দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। দুঃখপ্রকাশ করছি।

মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, শিবির ও তালামিয দুটিই আমাদের ভালোবাসার সংগঠন। এই দুটি সংগঠনের মধ্যে এমসি কলেজে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে আজকে আমরা বসেছিলাম। আমরা পরষ্পরই ইসলামী সংগঠন আমরা দেশ ও জাতির ভালো চাই। নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হলে বিরোধীপক্ষ উপকৃত হবে। ভবিষ্যতে আর কোন এ ধরণের ভুলবুঝাবুঝি তৈরি হয় আমরা পরষ্পর বসে এ ব্যাপারে মীমাংসার দিকে যাবো। কোন কর্মীও যেনো বাড়াবাড়ি না করে।

এদিকে, রোববার রাতে সেলেট মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত ঘটনার আপোষ নিষ্পত্তি হয়েছে। কয়েকজন ছাত্রের মধ্যে সংঘটিত অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি নিয়ে ৩য় পক্ষের অবৈধ ফায়দা হাসিল ও ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে এক মতবিনিময় সভা করেন সিলেট জামায়াত ও আঞ্জুমানে আল ইসলাহ নেতৃবৃন্দ।

রোববার সন্ধ্যায় নগরীর একটি প্রতিষ্ঠানে উক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংঘটিত অনাকাঙ্খিত ঘটনার ব্যাপারে নিন্দা জানানো হয় ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। ভবিষ্যতে এই ধরণের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।

সভায় সেদিনের ঘটনায় আহত তালামীয কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদের প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয় এবং তার সুস্থতা কামনায় মোনাজাত করা হয়। ইসলামী সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ় করা, পরস্পর উস্কানী ও উত্তেজনামূলক বক্তব্য পরিহারের আহ্বান জানানো হয়। দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট ঘটনায় ৩য় পক্ষ যাতে অবৈধ ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়। সভায় জুলাই বিপ্লবে শাহাদাতবরণকারী শহীদদের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে মোনাজাত করা হয়। জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়।

মতবিনিময় সভায় জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান এবং জেলা জামায়াত নেতা ও সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ।

আঞ্জুমানে আল ইসলাহ নেতৃবৃন্দের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব, হাফিজ নাজমুল হুদা, মাওলানা জৈন উদ্দিন ও কাজী বুরহান উদ্দিন প্রমূখ।