শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ৬৩ সদস্যের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কমিটি প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পদপ্রাপ্ত অনেকেই কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশার কথা লিখেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া অনেককে বাদ দিয়ে এবং আন্দোলনের বিরোধিতা করা কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় সংগঠনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকে আগামী ছয় মাসের জন্য নতুন কমিটির অনুমোদন দেন সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল।
কমিটি প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ১ নম্বর সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রবিউল ইসলাম মামুন কমিটির প্যাডে থাকা কিছু নাম মার্ক করে লিখেছেন, “এরা কারা? কোথা থেকে এলো?” তিনি আরও প্রশ্ন করেন, “ফয়সাল ভাই (কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক) ও আজাদ (শাবিপ্রবি সমন্বয়ক) ভাইসহ বাকি বিপ্লবী সহযোদ্ধারা কোথায়?”
এ বিষয়ে আজাদ শিকদার বলেন, “আমি এই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে কিছু অস্পষ্টতা পেয়েছি, যার জন্য নিজে থেকেই কমিটিতে থাকতে চাইনি। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যদি জুলাই বিপ্লবীদের সংগঠন হয়, তাহলে বলব কমিটি যথাযথভাবে গঠিত হয়নি। জুলাইকে ধারণ করে না, এমন অনেকেই কমিটিতে স্থান পেয়েছে।”
কমিটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “ফয়সাল হোসেন, যিনি কেন্দ্রীয় ১৫৮ জন সমন্বয়কের তালিকায় সহ-সমন্বয়ক ছিলেন, তাকে নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি, যা দুঃখজনক। এমনকি বিভাগীয় প্রতিনিধি বা উপদেষ্টা হিসেবেও তাকে রাখা হয়নি, যা স্পষ্ট বৈষম্য।”
অন্যদিকে, আন্দোলনের বিরোধিতা করা সুব্রত পাল শান্ত নামের এক শিক্ষার্থীকে নতুন কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার সহপাঠীরা জানান, জুলাই বিপ্লব চলাকালে সুব্রত আন্দোলনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন, যার কারণে তাকে ব্যাচের সব কার্যক্রম থেকে বয়কট ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাকিবুর রহমান শিশির এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “যে ছেলেকে তার ব্যাচ থেকে আন্দোলনের সময় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল, সে কীভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে স্থান পেল!?”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন অভিযোগ করেন, “জুলাই বিপ্লবের সময় নেতৃত্ব দেওয়া শাবিপ্রবির বেশিরভাগ সমন্বয়কদের বাদ দিয়ে আসাদুল্লাহ আল গালিফ নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। যেখানে আন্দোলনের সময় বিরোধিতা করা ছাত্রলীগ কর্মীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা শহীদদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।”
এ বিষয়ে সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ বখতিয়ার এবং সদস্য সচিব হিসেবে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম।