
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশে অপরাধের পরিমাণ বাড়েনি, আগের মতোই রয়েছে।
সোমবার (৩ মার্চ) বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমটিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি।
সাক্ষাৎকারে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমিতো হিসাব নিচ্ছি। অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি। আগের মতোই রয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রথম দিকে সমস্যা ছিল যে পুলিশ বাহিনী যাকে দিয়ে আমরা কাজ করাচ্ছিলাম, তারা ভয়ে রাস্তায় নামছিল না। দুইদিন আগে তারা এদেরকে গুলি করেছে। কাজেই মানুষ দেখলেই সে ভয় পায়। কাজেই তাকে ঠিক করতে করতেই আমাদের কয়েক মাস চলে গেছে। এখন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। এখন আবার নিয়মশৃঙ্খলার দিকে আমরা রওনা হয়েছি। কাজ করতে থাকবো।
এসময় মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘সময় নিচ্ছে। তারা প্রস্তুত হয়ে নিয়ে তাদের মানসিকতা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি। এটা একটা জিনিস হতে পারে। আরেকটা হলো যে আমরা তাদের বলেছি, যেকোনো পুলিশ স্টেশনে তারা যেকোনো রিপোর্ট করতে পারে। আইনের আশ্রয় নিতে পারে এবং সেটাকে আমরা সহজ করেছি এখন। বলছি তোমরা ইন্টারনেটে দিয়ে দিতে পারো, অনলাইন পেইজ করতে পারো। যাতে মামলা করতে গিয়ে, হয়রানি হয় – বরাবরই বাংলাদেশের যে ঐতিহ্য, থানাতে গেলে যে সমস্ত হয়রানি হয়, সেটা থেকে বাঁচার জন্য যেন অনলাইন করে। সেই অনলাইনের ব্যবস্থা করছে। যা যা আমাদের মনে হয়েছে যে মানুষকে সহজ করা যাবে, তাদের তথ্য আদানপ্রদান সহজ করা যাবে এবং মামলা করা সহজ করা যাবে, ইত্যাদি।’
সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার বক্তব্যে দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন ‘নিজেদের মধ্যে হানাহানি বন্ধ না করলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।’ এই বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা তো সবসময় থাকে। একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এটাকে (দেশ) আনসেটেল করার জন্য। এটা তো সবসময় থ্রেট আছেই। প্রতিক্ষণেই আছে, প্রতি জায়গাতেই আছে। কাজেই এটা তো সবসময় থাকবে।’
হুমকিটা আওয়ামী লীগের দিক থেকে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই। এটা তো অবভিয়াস। তারা মাঝে মাঝেই ঘোষণা করছে। বক্তৃতা দিচ্ছে। অ্যাড্রেস করছে। আপনি-আমরা সবাই শুনছি। মানুষ উত্তেজিত হচ্ছে।’
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম যে এখনই আমরা সংলাপটা শুরু করব। এটাও পারি নাই। সংলাপ শুরু হতে হতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো সময়মতো আমরা করতে চেয়েছি, ওই সময়ে করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছি। আমাদেরকে ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের রিপোর্ট দেওয়ার কথা। তারা দিতে পারে নাই। আমি অভিযোগ করছি না। কারণ বিশাল একটা কাজ। আরেকটু সময় চেয়েছে- এক মাস, দুই মাস। ওইটুকু একটু পিছিয়ে গেছে। এগুলো আর কী। কাজ করতে গেলে যা হয়।’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘খুবই ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয় নাই। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে। এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারব না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।
আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া বা দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের দাবির ব্যাপারে সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো যে আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমরা সব ভাই ভাই। আমাদেরকে এই দেশেই বাঁচতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিত, তার বিচার হতে হবে।