মাগুরায় ধর্ষণের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শিশুটির জানাজার পর ক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় শহরের নোমানী ময়দানে জানাজা শেষ হওয়ার পরপরই এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের নিজনান্দুয়ালী চরপাড়ায় অভিযুক্ত বোনের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভাশুর বসবাস করতেন। অভিযোগ রয়েছে, বোনের স্বামীর সহযোগিতায় তার শ্বশুর শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনা জানার পর শাশুড়ি ও ভাশুর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
জানাজার পর স্থানীয় জনতা ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণের সময় তারা অভিযুক্তদের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে আগেই ওই বাড়িটি তালাবদ্ধ থাকায় কেউ হতাহত হয়নি।
মাগুরা ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার রিপন হোসেন জানান, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা আমাদের বাধা দেয়, ফলে আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি।’
এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ওসি মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে, ফলে বাড়িতে কেউ ছিল না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা কাজ করছি।’
সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিশুটির মরদেহ মাগুরায় পৌঁছায়। সন্ধ্যা ৭টায় নোমানী ময়দানে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে তারাবির নামাজের পর গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে, দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শিশুটির মৃত্যু হয়। সিএমএইচের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ জানান, শিশুটির দুই দফায় ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়, যার মধ্যে দ্বিতীয়বার সিপিআর দেওয়া হলেও হৃৎস্পন্দন ফেরেনি এবং দুপুর ১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
কয়েকদিন আগে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল শিশুটি। গত বৃহস্পতিবার সকালে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর, তারপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শিশুটিকে সিএমএইচে নেওয়া হয়, যেখানে শেষ পর্যন্ত সে মারা যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।