স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবে রূপ নিল। বহুল প্রতীক্ষিত কার্গো ফ্লাইট প্রথমবারের মতো সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল। বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে স্পেনের উদ্দেশ্যে প্রায় ৬০ টন গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ফ্লাইটটি রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। এর মাধ্যমে সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।
ফ্লাইটটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, "সাফল্য কোনো গন্তব্য নয়, এটি একটি চলমান যাত্রা। ফ্যাসিস্ট আমলের সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলা করে আমরা আজকের এই সাফল্যে পৌঁছেছি।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগে ব্যবসায়ীরা উচ্চ খরচে অন্য দেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন, এখন সিলেট থেকেই কম খরচে কার্গো রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এর ফলে ঢাকা থেকে ইউরোপগামী কার্গো পরিবহন ব্যয় ১৩ শতাংশ কমেছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, "সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি আজ পূরণ হলো। আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সিলেটের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।"
এছাড়া তিনি বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিমান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, "আজ দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। আপাতত সপ্তাহে দুটি কার্গো ফ্লাইট চলবে, ভবিষ্যতে তা আরও বাড়ানো হবে।"
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, বিমানবন্দর কর্মকর্তারা এবং সুধীজন।
প্রথম দিনে ঢাকার তিনটি কোম্পানি তাদের পণ্য কার্গো ফ্লাইটে রপ্তানি করেছে। ওসমানী বিমানবন্দরে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের কার্গো কমপ্লেক্স ও অত্যাধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারফ্রেইট বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. ফিরোজ হোসেন বিশ্বাস জানান, দেড় বছর ট্রায়ালের পর পূর্ণাঙ্গ কার্গো ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হলো। আগামি ১ ও ৪ মে আরও দুটি ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, সরাসরি কার্গো ফ্লাইটের মাধ্যমে রপ্তানি ও আমদানি দুটোই বাড়বে, যা সিলেটের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে। সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজিবুর রহমান সরকারকে আহ্বান জানান, ফ্লাইট চালু রাখার পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট, প্যাকেজিং এবং ফ্রিজিং সুবিধাও চালুর জন্য।