• ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পেল জাতিসংঘ

AMZAD
প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার, ২০২৫ ১২:৪৫:৩২
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পেল জাতিসংঘ

জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)। সম্প্রতি প্রকাশিত ১১৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গুলি, গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আন্দোলন দমন করতে আওয়ামী লীগ সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের দমন করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশে এই সময়ে ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত মারণাস্ত্রের শিকার। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১,৭০০ এর বেশি মানুষকে, যার মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। নারী আন্দোলনকারীদের ওপর যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল সরেজমিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুরে তদন্ত চালিয়েছে এবং ২৩০টির বেশি সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এ ছাড়া, সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক ৩৬ কর্মকর্তার সাথেও কথা বলেছে দলটি।

প্রতিবেদনে র‍্যাব ও এনটিএমসিকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানানো হয়েছে। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আন্দোলনের নেপথ্যে শুধুমাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলন নয়, বরং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, এবং সামাজিক বঞ্চনার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের নিরপেক্ষ তদন্ত, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বলেছে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তদন্তের উদ্যোগ নেন এবং জাতিসংঘকে তদন্তের অনুরোধ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের একটি তথ্যানুসন্ধান দল বাংলাদেশ সফর করে এবং এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।