
ওয়াশিংটন, ডি.সি. ও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শনিবার হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভে অংশ নেয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ধনকুবের মিত্র ইলন মাস্কের নেতৃত্বে সরকারব্যবস্থা সংস্কার ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের প্রতিবাদে এটি ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণআন্দোলন। এই খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ওয়াশিংটন মনুমেন্টের চারপাশে মেঘলা আকাশ ও হালকা বৃষ্টির মধ্যেও জড়ো হয় প্রায় ২০ হাজার বিক্ষোভকারী। আয়োজকদের দাবি, ১৫০টির বেশি সংগঠন এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই নয়, প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে কানাডা ও মেক্সিকোতেও।
প্রিন্সটন থেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত বায়োমেডিক্যাল বিজ্ঞানী টেরি ক্লাইন বলেন, “ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, ডোজ প্রকল্প, শুল্ক আর শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ—সবকিছু নিয়েই আমরা ক্ষুব্ধ। আমাদের দেশ পুরোপুরি হুমকির মুখে।”
ন্যাশনাল মলে একে একে জমতে থাকে মানুষের ঢল। কেউ ইউক্রেনের পতাকা নিয়ে, কেউ ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ পরে অংশ নেয় বিক্ষোভে। ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান শোনা যায় জনসমাগমে। মঞ্চ থেকে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্যরা ট্রাম্পের নীতির কঠোর সমালোচনা করেন।
অবসরপ্রাপ্ত অর্থ ব্যবস্থাপক ওয়েন হফম্যান (৭৩) বলেন, “এই শুল্কনীতি আমাদের কৃষকদের ধ্বংস করবে, চাকরি কাড়বে। মানুষ তাদের সঞ্চয় হারাচ্ছে।”
অন্যদিকে, ট্রাম্পপন্থী ওহাইয়োর ২০ বছর বয়সী কাইল (ছদ্মনাম) ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ টুপি পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। যদিও তিনি স্বীকার করেন, “বেশিরভাগ মানুষই শান্তিপূর্ণ, কিছুজন বাজে ভাষা ব্যবহার করলেও বাকিরা মনোযোগ দিয়ে কথা শুনেছেন।”
একই দিন ফ্লোরিডায় গলফ খেলে ট্রাম্প মার-এ-লাগো রিসোর্টে ফেরেন। সেখানে থেকে কয়েক মাইল দূরে আরও ৪০০ জনের বেশি প্রতিবাদ করেন।
ট্রাম্প ও মাস্কের নেতৃত্বে গঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডোজ) ফেডারেল পর্যায়ে চাকরি ছাঁটাই চালিয়ে যাচ্ছে। ২.৩ মিলিয়ন ফেডারেল কর্মীর মধ্যে ইতোমধ্যে ২ লাখের বেশি চাকরি কাটা হয়েছে। শুক্রবার ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস) ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
বাল্টিমোরের কাছে সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সদর দফতরের সামনেও বিক্ষোভ হয়। সেখানে ৬৫ বছর বয়সী লিন্ডা ফালকাও বলেন, “আমি ভীত এবং রাগান্বিত। আমি আমার টাকা চাই, আমার সুবিধা চাই!”
তবে হোয়াইট হাউসের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি লিজ হাস্টন বলেন, “ট্রাম্প সামাজিক নিরাপত্তা বা মেডিকেডে কোনো কাটছাঁট করবেন না।”
যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভের আগে ইউরোপের বার্লিন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, প্যারিস ও লন্ডনেও আমেরিকানরা ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
সমর্থকদের মতে, ট্রাম্পের এই কঠোর পদক্ষেপই আমেরিকাকে নতুন পথে এগিয়ে নিচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, তার নীতিগুলো দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।