• ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আশা, ঐতিহ্য ও প্রতিরোধের বার্তা নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-র আগমন

AMZAD
প্রকাশিত ১৪ এপ্রিল, সোমবার, ২০২৫ ১৩:০৯:১৫
আশা, ঐতিহ্য ও প্রতিরোধের বার্তা নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-র আগমন

আজ সোমবার, ১৪ এপ্রিল—বাংলা পঞ্জিকার প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখ। সূচনা হলো নতুন বছর ১৪৩২-এর। বৈশাখের রঙে, উৎসবে, আর আবেগে আজ বাঙালির হৃদয়জুড়ে বাজছে নতুন সময়ের জয়ধ্বনি।

বৈশাখ কেবল প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের বার্তা নয়, এটি বাঙালির অন্তরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঝড়-বৃষ্টি, ধুলোর মাঝে, বজ্রের গর্জনে—প্রকৃতির এই বৈরিতার মাঝেও বৈশাখ আসে নবজাগরণের প্রতীক হয়ে। কৃষ্ণচূড়ার আগুনরাঙা ফুল যেন বলে দেয়, “এসেছে উৎসব, এসেছে বৈশাখ।”

এ বছরের বৈশাখ এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে—স্বৈরশাসনের পতনের পর আশা ও নতুন সম্ভাবনার আলো নিয়ে। নতুন বছর তাই শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা বদল নয়, এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এ নববর্ষ এসেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিজয়ের আবহ নিয়ে—একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে।

আজ দেশের সর্বস্তরের মানুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পালন করছে বাংলা নববর্ষ। পুরোনো সব গ্লানি ভুলে, নতুন আশায় মুখরিত হয়ে উঠেছে উৎসব। মুখে মুখে ধ্বনিত হচ্ছে, “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…”

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে কেন্দ্র করে সারাদেশে নেয়া হয়েছে নানান কর্মসূচি। সরকারি ছুটি থাকায় উৎসবের আমেজ আরও বেড়েছে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজন করেছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’—এবারের প্রতিপাদ্য: ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান।’

ভোর থেকে রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজন করেছে তাদের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুপুরের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে চীনা দূতাবাসের সহায়তায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কনসার্ট, এবং সন্ধ্যায় থাকছে চোখধাঁধানো ড্রোন শো।

বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি দপ্তরও আয়োজন করেছে বৈশাখী মেলা, কনসার্ট ও নানা অনুষ্ঠান।

ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়, বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব একসময় ছিল হালখাতা—ব্যবসায়িক পুনরারম্ভের দিন। মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন কৃষিকাজ ও রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে। প্রথমে এটি পরিচিত ছিল ‘ফসলি সন’ নামে।

পাকিস্তান আমলে পহেলা বৈশাখ ছিল বাঙালির জাতীয়তাবাদের এক সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের মাধ্যম। ষাটের দশকে ছায়ানটের রমনা বটমূলে আয়োজিত সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পেয়েছিল বিশেষ তাৎপর্য। স্বাধীনতার পর, নববর্ষ উদযাপন হয়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

আজ পহেলা বৈশাখ কেবল আনন্দ আর সংস্কৃতির উৎসব নয়, এটি বাঙালির আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ, প্রতিরোধের ভাষা এবং একটি নতুন সময়ের প্রতিশ্রুতি।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এ তাই বাঙালির উচ্চারণ একটাই—আলো হোক, ভালো হোক, এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।