• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

গাজায় আবারও ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত অন্তত ৩৭

AMZAD
প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল, শনিবার, ২০২৫ ০১:২৫:৪২
গাজায় আবারও ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত অন্তত ৩৭

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর একের পর এক বিমান হামলায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব হামলার বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের তাঁবু শিবিরে চালানো হয়। বৃহস্পতিবার রাতভর এসব হামলা চলে বলে জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিবিসিকে আল-মাওয়াসি এলাকার স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাতে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর তাঁবুগুলোতে ভয়াবহ আগুন ধরে যায়। এতে বহু মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা নিহত হন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমি আতঙ্কিত চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে উঠি, দেখলাম আগুন এক তাঁবু থেকে আরেকটিতে ছড়িয়ে পড়ছে।”

সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল জানিয়েছেন, খান ইউনিসের উপকূলবর্তী আল-মাওয়াসিতে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যাতে অন্তত ১৬ জন নিহত হন এবং ২৩ জন আহত হন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

বিবিসির যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপে পরিণত শিবিরের চারপাশে বেঁচে যাওয়া মানুষজন খোঁজ করছেন তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের। এক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি বলেন, “আমার পাশের তাঁবু জ্বলছিল। নারীরা দৌড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছিল। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়েছিল যে আমরা অনেককে বাঁচাতে পারিনি। এটা হৃদয়বিদারক।”

এক নারী জানান, ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের ১০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, “অস্থায়ী তাঁবুতে জ্বলন্ত শিশুদের দেখা আমাদের সকলের হৃদয় নাড়িয়ে দেওয়ার মতো।”

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) বিবিসিকে জানায়, খান ইউনিস এলাকায় এক হামাস ‘সন্ত্রাসী’কে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে এবং বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে তারা পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনাটি তদন্তাধীন।

গাজার সিভিল ডিফেন্স আরও জানায়, উত্তরের বেইত লাহিয়ায় হামলায় নিহত হয়েছেন ৭ জন, আল-মাওয়াসির কাছে ২ জন, এবং জাবালিয়ায় ১০ জন। জাবালিয়ায় একটি পরিবারের ৭ সদস্য ও একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ৩ জন নিহত হন।

ইতিমধ্যে হামাস ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে ৫৯ জন বন্দির মুক্তি চায়, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রস্তাবে ছিল ১০ বন্দির বিনিময়ে ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতি।

হামাসের শীর্ষ আলোচক খলিল আল-হাইয়া এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, “নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক আংশিক কোনো চুক্তি মেনে নেবে না হামাস।”

জবাবে, ইসরায়েলের চরম ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেন, “হামাসের বিরুদ্ধে জাহান্নামের দরজা খুলে দেওয়ার সময় এসেছে।”

১২টি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা, যেমন অক্সফাম ও সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, গাজার মানবিক ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা এটিকে “এই প্রজন্মের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়গুলোর একটি” বলে অভিহিত করেছে।

ইসরায়েল বলছে, হামাসকে চাপে রাখতে অবরোধ চালু থাকবে এবং দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতির সময় ২৫ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করায় সংকট নেই।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়। এর জবাবে ইসরায়েলের অভিযানে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ৬৫ জন নিহত হয়েছেন।