• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মৌলভীবাজারে সালিশে নিজের ছেলে মিথ্যা চোর অপবাদ দেওয়ায় কৃষক বাবার আত্মহত্যা

AMZAD
প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর, শনিবার, ২০২৪ ১৬:৪১:২৭
মৌলভীবাজারে সালিশে নিজের ছেলে মিথ্যা চোর অপবাদ দেওয়ায় কৃষক বাবার আত্মহত্যা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : ইউনিয়ন পরিষদে সালিশে ছেলেকে একতরফা রায়ে চোর অপবাদ দিয়ে অর্থদণ্ড করা হয়। এছাড়া জনসম্মুখে তাকে ও পরিবারের সদস্যদের নানা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে গালমন্দ করা হয়। এমন মিথ্যা অপবাদ ও অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন বর্গাচাষি কৃষক ধন খাঁ।

এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে দায়ের করা মামলায় ওই ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন (৪৫), সদস্য মহসিন (৪২)সহ এজহারভুক্ত ৬ জন আসামিকে পলাতক অবস্থায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩।

এর মধ্যে জামিনে বের হওয়া এক আসামিসহ অন্যান্য আসামি প্রতিনিয়তই প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছেন।

মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের আটঘর মাঝপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ধন খাঁর পরিবারের সদস্যরা এমন অভিযোগ জানান। এ সময় তার ছেলে আরব খাঁ জানান, আমরা দিনমজুরি ও কৃষিজমি বর্গা দিয়ে চাষাবাদ করে জীবনযাপন করলেও আমাদের নিজ এলাকায় সৎ, সরল, স্বচ্ছ ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ হিসেবে আমাদের পরিবার ও গোষ্ঠীর সুনাম ও সম্মান রয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গত ৩রা নভেম্বর সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে আনুষ্ঠানিক সালিশ ডেকে অন্যায়ভাবে একতরফা আমাকে গরু চুরির মিথ্যা অপবাদ দেয়ায় ও আমার পিতাকে নানা হেও প্রতিপন্ন কথা বলে অপমানের কারণে ভোরেই সালিশকারীর বাড়ির গেইটের সামনে কাঁঠাল গাছে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এই গরু চুরির নাটক সাজানোর অন্যতম পরিকল্পনাকারী আমাদের এলাকার নানা অপকর্মের হোতা ইউছুফ। এ কারণ কয়েক দিন আগে ইউছুফের ভাতিজা হাবিবুর আমাদের ঘর থেকে আট হাজার টাকা চুরি করে। এটা দেখে ফেলে হাবিবের কাছ থেকে ওই টাকা ফেরত আনা হয়। তার মামাতো ভাই রহমতও চুরি করে ধরা পড়ে।

এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই ইউছুফ গরু চুরির পরিকল্পিত নাটক সাজায়। আমার মামাতো বোনের স্বামী রূপন মিয়া শ্রীমঙ্গল মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা। তাকে গরু চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িঘর তল্লাশি করতে থাকে। শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর ইউনিয়নের পাচাউন গ্রাম থেকে অক্টোবরের শেষের দিকে ৪টি গরু চুরি হয়। আমাদের বাড়িতে ৩১শে অক্টোবর বেড়াতে আসেন আমার মামাতো বোন ইমা বেগম। তার স্বামী গরু চুরি করেছে সন্দেহে ইউছুফ, মহসীন, জাকির, মুফতিসহ কয়েকজন আমাদের বাড়িতে গিয়ে বার বার অনেক খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু তারা সেখানে গরু পায়নি। ৩১শে অক্টোবর রাতে ইমাকে ইউছুফের বাড়িতে নিয়ে ভয় দেখিয়ে মারধর করে আমি গরু চুরিতে জড়িত ছিলাম বলে স্বীকারোক্তি নেয়। ৩রা নভেম্বর ইউনিয়ন মিলনায়তনে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সালিশে আমাকে একতরফা পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে চোর সাব্যস্ত করে সদস্য সুহেল মিয়া মারধর করে এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সালিশ বৈঠকে আমাদের কারও কোনো কথা শোনা হয়নি। আমার বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাইসহ সালিশে উপস্থিত অন্যরা অন্যায় বিচার ও রায়ের প্রতিবাদ জানালে আমার পিতাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নানা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অপবাদ ও গালমন্দ করা হয়।

তিনি বলেন, আমার বাবা একজন সরল মনের সৎ কৃষিজীবী মানুষ। চাপিয়ে দেয়া এই অন্যায় রায়ে আমার বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ওই রাতেও ইউছুফ রায়ের টাকার জন্য আমাদের বাড়িতে আসে এবং চাপ দেয়। নানা ভয়ভীতি দেখায়। লোকলজ্জায় তাদের এই চাপিয়ে দেয়া অন্যায় ও অপমানজনক অপবাদ থেকে বাঁচতে আমার বাবা আত্মহত্যার মাধ্যমে দুনিয়া ছাড়তে বাধ্য হন।

এই ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা করি। মামলায় আসামি করা হয়- ইউছুফ (৩৫), হাবিব মিয়া (২০), কাছন মিয়া (৪৫), ফরিজা বেগম (৫০), নাজিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন (৪৫), ইউপি সদস্য মহসিন (৪২), মুফতি (৩৫), জাকির হোসেন (৩২)সহ প্রমুখ।