• ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে বিরল রাজকীয় সংবর্ধনা, প্রশ্নবিদ্ধ জুলাই আগস্টের চেতনা

AMZAD
প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর, শনিবার, ২০২৪ ১৭:০৮:৪৮
সিলেটে বিরল রাজকীয় সংবর্ধনা, প্রশ্নবিদ্ধ জুলাই আগস্টের চেতনা

বিশেষ প্রতিনিধি : বিরল রাজকীয় সংর্বধনা নিয়ে সিলেট ছাড়ছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দীকি এনডিসি। পতিত আওয়া মীলীগ সরকারের টপ অর্ডারের এই দোসর বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছিলেন ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে পদায়ন করেছেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে। তার বিদায় উপলক্ষে ২৯ নভেম্বর (শুক্রবার) রাতে এক রাজসিক সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট। সংবর্ধনাস্থল সিলেট সার্কিট হাউজ সাজানো হয় বর্ণিল আলোক সজ্জায়। সেই সাথে ছিল বিলাসি ভূরিভোজ। সার্কিট হাউজের ভেতরে নান্দনিক রূপে বানানো হয় সেলফি স্টেজ। গতকাল দিন থেকে সংবর্ধনার প্রস্ততি নিয়ে ব্যস্ত রাখা হয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের। কিন্তু অনুষ্টান স্থলে বসে কথা শোনা বা বলার সুযোগ হয়নি তাদের। সন্ধ্যা ৭ টায় সার্কিট হাউজের কনফারেন্স রুমের শুরু হয় সংবর্ধনার কার্যক্রম। এক পর্যায়ে রুমের দরজা লাগিয়ে বিচ্ছেদ যন্ত্রনার কথা মালা শুনানো হয় বিদায়ী কর্তাকে।

জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এরকম ঝমকালো সংবর্ধনার ঘটনা বিরল। বিগত দিনে, এমন জমকালো সংবর্ধনার আয়োজন হয়নি সিলেট। অথচ ছাত্র জনতা রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী যখন সংস্কারের দাবী ও ব্যবস্থা চলছে, ঠিক এ সময় রাজকীয় এমন সংবর্ধনা জুলাই আগষ্টের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জুলাই আগষ্টের চেতনার ফসলে সিলেটের জেলা প্রশাসক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। নয়তো জেলা প্রশাসকের চেয়ার তার জন্য স্বপ্নই থেকে যেতো। এখন তার হাতেই পেরেক ঢুকলো জুলাই আগষ্টের চেতনায়। তাই প্রশ্ন কার ঋণ শোধ করলেন তিনি। অবিশ্বাস্য, অপ্রত্যাশিত এমন সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন, বিভাগের ৪ জেলার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। পতিত সরকারের অর্থ পাচার, দুর্ণীতি, বিদেশী ঋণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন টানাপোড়নে। কৃচ্ছতা সাধনের চেষ্টা চলছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, সেই পালর্স অবশ্যই অজানা নয়, সিলেট জেলা প্রশাসকের। তারপরও সরকারী কোটির টাকার মতো অর্থ ব্যয়ের মধ্যে দিয়ে এমন সংবর্ধনায় দিয়ে কি ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছেন জাতিকে, সেই প্রশ্ন এখন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

দামী দামী গাড়ি হাকিয়ে, জনগনের টেক্সের টাকার তেল জ্বালিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে সংবর্ধনায় যোগদান করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, সে বিষয়টি কি তাদের অন্তরাত্নাকে ভাবায়নি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছ, গত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের আমল থেকে ভোগবাদী ব্যবস্থায় জড়িয়ে পড়া মজ্জাগত হয়ে পড়েছে সরকারী কর্মকর্তাদের। ৫ আগষ্টের পর তারা এখন আরও সক্রিয়। কোন পরির্তন নেই, জনতার বিপ্লবের রক্তচুক্ষতে পড়েছিল কেবল পুলিশ। কিন্তু পুলিশের চেয়ে বিগত সরকারের চরম দোসরে পরিণত হয়েছিল মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো। কর্মসূচীতে ছিল সক্রিয়। এভাবে বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে পতন ঘটে আওয়ামীলীগ নামক সংগঠনটির সরকার ও সাংগঠনিক ব্যবস্থার। দলের সাধারন নেতাকর্মীরা কোন পাত্তাই পেত না মাঠ প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। তবে আওয়ামীলীগের স্থানীয় প্রভাবশালীরা ছিল ভিন্ন।

ব্যক্তি বিশেষের সাথে সর্ম্পক বজায় রেখে অনিয়ম দুর্নীতির মেশিনে পরিণত হয়েছিল মাঠ প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তারা। এই কর্মকর্তাদের অবৈধ অর্থ, কর্মকান্ডের সন্ধান নেয়া যেন বারণ। সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু তারা এখনও বহাল তবিয়তে, বেকাদায় পুলিশ, আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থক নেতারা কেউ পালিয়ে, কেউ জেলে, কেউ ফেরারী এক অনিশ্চিত জীবনের পথে। সারাদেশের মতো সিলেটও ছিল অভিন্ন। বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনারও স্বৈরাচারের ল্যাসপেন্সারদের পদায়ন করে সাজিয়ে ছিলেন উপজেলা প্রশাসনকে। এদের প্রত্যকের ব্যাকগ্রাউন্ড, ছাত্রলীগ রাজনীতি বা আওয়ামীলীগের নিখাদ পরিচয়ে পরিচিতি। এই কর্মকর্তারা ছাত্রজনতার উপর হামলা, গুলি, মামলা সহ হয়রানীতে রেখেছিল বিশেষ ভূমিকা। সেই সাথে সিলেটের প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে উপজেলায় সরকারী সম্পদ রক্ষায় চেয়ে লটপাটে সহযোগী হয়ে গড়ে তুলেছে অঢেল অর্থ বিত্ত। এখন তারা বহাল, জুলাই আগষ্টের চেতনাকে কিভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে জন অসন্তোষ সৃষ্টি করা যায়, সেই পাঁয়তারাতেই তারা ব্যস্ত। উপজেলা প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার কেবল স্বৈরাচার হয়ে উঠেনি, আমাদের উর্ধ্বতনরাও এখন পুরোদমে স্বৈরাচারী আচরণে পুষ্ট।

কারন তাদের পদায়ন দলীয় যোগাযোগীতেই হয়েছে, ছিলনা যোগ্যতার বিবেচনায়। সেকারনে তাদের সিদ্ধান্তকে জ্বী জ্বী বলেই সম্মতি দিতে হয় আমাদের। আলোচনা বা পরামর্শের কোন সুযোগ নেই, উপর ওয়ালাদের কেবল অর্ডারেই চলছে মাঠ প্রশাসন এখনও। স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও এখন স্বৈরাচারের শক্তিশালী মেশিন মাঠ প্রশাসন চলছে আগের মতোই, এর নজির বিপ্লবী সরকারের আমলে স্বৈরাচারের ঘনিষ্ট দোসর বিভাগীয় কমিশনারের রাজসিক তথা ভয়াবহ বিদায় সংবর্ধনা।

সিলেট সার্কিট হাউজের নাজির জনি চক্রবর্তী বলেন, অনুষ্টান উপলক্ষে রান্নাবান্নার বিশাল আয়োজন ছিল, কাচ্ছি বিরানীসহ তালিকায় ছিল বাহারী রিচ ফুড। কর বিভিন্নপদ ছিল, আলোক সজ্জা করা হয়েছিল গোটা সার্কিট হাউজ। তবে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, খাবার সহ আলোজ সজ্জায়, সেই বিষয়টি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।