আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত সংকটপূর্ণ।যুদ্ধে বিধ্বস্ত এই অঞ্চলটির বাসিন্দারা ইতোমধ্যেই গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এর ওপর শীতকাল তাদের জীবনে নতুন সংকটের সৃষ্টি করেছে। শরণার্থীরা এখন সমুদ্রপাড়ে, অস্থায়ী তাবুতে, অথবা খোলা আকাশের নিচে বাস করছে।
গতবছর অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বর্বর হামলার কারণে গাজার অধিকাংশ মানুষের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং শরণার্থী শিবিরে জায়গার অভাবে লাখো মানুষ এখন সমুদ্রের পাড়ে বসবাস করছে। শীতের প্রকোপ, বৃষ্টিপাত, এবং খাদ্য ও ওষুধের সংকট তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
মুহাম্মদ আল-হালাবি, একজন গাজাবাসী, সমুদ্রপাড়ে একটি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। তিনি বিবিসি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “তুফানের সময় তাবুর সবকিছু ভেসে গেছে।এমনকি, আমরা একটি দুই মাসের শিশুকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেছি।”
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ২.৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত, যার মধ্যে ৯০% শরণার্থী অস্থায়ী তাবুতে বসবাস করছে। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। খান ইউনিসের শায়মা ইসা বলেন, “আমার সন্তানদের শরীর জমে যাচ্ছে। আমরা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি। আমাদের কোনো শুষ্ক আশ্রয় নেই।”
খাদ্যের সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে। রুটি সংগ্রহের জন্য শত শত মানুষ প্রতিদিন বেকারির সামনে ভিড় জমাচ্ছে।দেইর আল-বালাহর হানান আল-শামালি বলেন, “আমার ডায়াবেটিস আছে, আমি ভিড় ঠেলে এগোতে পারি না। এত কষ্ট করেও প্রায়ই রুটি পাই না।”
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য সঠিকভাবে বিতরণ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, গাজায় আসা সাহায্য সামগ্রী প্রায়ই লুট হয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রধান এন্তোয়ান রেনার্ড বলেন, “গাজায় যে অবস্থা চলছে, তা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভয়াবহ। মানুষ খাবার পাচ্ছে না।”
গাজার মানুষের জন্য শীতকাল যেন নতুন এক যুদ্ধের নাম।যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত এই অঞ্চলের শরণার্থীরা এখন বাঁচার জন্য প্রতিদিন সংগ্রাম করছে। তাদের দুর্দশা যেন মানবতার প্রতি এক কঠিন প্রশ্ন রেখে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি